সরাইলে সেচ সংকটে বিপাকে চাষীরা

 

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রিতিনিধি ঃঃ
চলছে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ। সরু হয়ে গেছে পাশের খাল। কখনো এঁকেবেঁকে চলছে, আবার কখনো একেবারে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানির প্রবাহ। কাজের প্রয়োজনে কখনো খালের মাঝখানে দেয়া হচ্ছে বাঁধ। ফলে সরাইলের সেচ প্রকল্পে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। সবুজের ভরা মৌসমে জাফর খালে এখন গরু চরছে। লালচে হয়ে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে অনেক জমি। বন্ধ হয়ে গেছে বিএডিসি’র অনুমোদিত অনেক সেচ পাম্প। ফলে সরাইলে চাষ করা ১০ সহস্রাধিক হেক্টর বোরো ধানের জমি এখন হুমকির মুখে। এ অবস্থায় দিশাহারা কৃষকরা কখনো যাচ্ছেন ইউএনও’র কাছে। অভিযোগ করছেন। আবার পানির দাবিতে দাঁড়িয়ে পড়ছেন মহাসড়কে।

বিএডিসি, ইউএনও’র কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার লক্ষ্যে আশুগঞ্জ থেকে সরাইলের বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত মহাসড়কের ৫০ কিলোমিটার জুড়ে চারলেন উন্নয়নের কাজ চলছে। এ কাজের জন্য আশুগঞ্জ থেকে সরাইল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের পাশের খালের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি ভরাট হয়ে গেছে। কাজ শুরুর আগে ৩৫-৪০ ফুট প্রস্থের খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হতো। বর্তমানে ওই খালের প্রস্থ ৫-৬ ফুট। অনেক জায়গায় আরো কম। মাঝে মধ্যে বালু পড়ে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অগণিত জায়গায় প্রবাহের দিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। খালের গভীরতাও অনেক কমে গেছে। এসব কারণে আশুগঞ্জ এগ্রো ইরিগেশন সেচ প্রকল্পের (সবুজ প্রকল্প) আওতায় সরাইল উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান চাষের ফলন অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

গত ৪ দিন সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে- পানিশ্বর, বিটঘর, বেড়তলা, নাইলা, সরাইল সদরের সৈয়দটুলা, কুট্রাপাড়া, চুন্টা ইউনিয়নের বড়বল্লা, রসুলপুর ও চুন্টায় পানি প্রবাহ অনেকাংশে কমে গেছে। প্রকল্পের প্রধান খালটি কুট্রাপাড়া এলাকার পর নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ইসলামাবাদ (গোগদ) থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত একেবারে শুকিয়ে গেছে। খালের সাড়ে ৫ কিলোমিটার অংশে পানি নেই। সেখানে অন্তত ২০-২২টি সেচ পাম্প সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পাম্প বিকল হয়ে পড়ে আছে। সরাইল উপজেলা কৃষক সমিতির সভাপতি দেবদাস সিংহ রায় বলেন, মহাসড়ক ফোর লেন হোক। কিন্তু ৩৫ হাজার কৃষক ব*াচাতে আগে খালটি রক্ষা করা দরকার। বিএডিসি’র আশুগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান বলেন, সরাইলে ৫৫০ কিউসেক পানির দরকার। খাল ভরাট হয়ে যাওয়াতে শুধু ১৫০ কিউসেক পানি দেয়া যাচ্ছে। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, প্রকল্পের পানির প্রবাহ সঠিক রাখতে সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে ৬-৮ ফুট প্রশস্ত ড্রেন নির্মাণের কথা আছে। কিন্তু বর্তমানে একই সঙ্গে দুটি কাজ অসম্ভব। কাজ শেষে জুন মাসের দিকে ড্রেনের কাজ হবে। এলাকাভিত্তিক পানি বণ্টনের কথা বলেছিলাম। কিন্তু কৃষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে সেটিও হচ্ছে না। বৃষ্টিই এখন মূল ভরসা।

শিরোনাম