রাতেও রাস্তা অবরোধ করে রাখছে মায়ানমারেরর বিক্ষোভকারীরা

 

সংবাদ জমিন ডেস্ক ঃঃ
জান্তাবিরোধীরা রাতেও মিয়ানমারের রাজপথ ছাড়ছেন না। শনিবার রাতেও মোমবাতি জ্বালিয়ে রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন তারা। বিক্ষোভ চলাকালে গত কয়েকদিন ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পরও রাজপথ ছাড়ছেন তা গণতন্ত্রের সমর্থকরা। বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন বন্ধের জন্য সামরিক জান্তাদের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশই বাড়ছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে পশ্চিমাদের পাশাপাশি এবার সোচ্চার হয়েছে আসিয়ান প্রতিবেশীরাও। গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন বিক্ষোভ করে আসছেন দেশটির লাখ লাখ মানুষ। এই বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় এখন পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বিক্ষোভ সহিংস উপায়ে দমনের চেষ্টা করায় পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিন্দা জানিয়েছে। মিয়ানমারের এশীয় প্রতিবেশিরাও নজিরবিহীন সমালোচনা করেছে দেশটির সামরিক সরকারের।

শনিবার রাতের বিক্ষোভে দেশজুড়ে প্রায় ২০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন থেকে উত্তরাঞ্চলীয় ছোট শহর কাচিন এবং সর্বদক্ষিণের শহর কাওথং থেকেও বিক্ষোভকারীদের আটক করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে জানিয়েছে রয়টার্স। শনিবার রাতে দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছেন; যাদের মধ্যে অনেক মেডিক্যাল কর্মীও ছিলেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিজিমা নিউজের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পোশাকে মেডিক্যাল কর্মীরা মান্দালয়ে ভোর পর্যন্ত বিক্ষোভ করছেন। বিক্ষোভে মোমবাতি দিয়ে তিন আঙুলের স্যালুটের প্রতিবাদী আকৃতিও তৈরি করা হয়। ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা হয়েছে ইয়াঙ্গুনে। শনিবার রাতেও সেখানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ঝটিকা অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ‌‘তারা এখন আমাদের রাতের বিক্ষোভও দমন করছে। ধারাবাহিকভাবে স্টান গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছে। ইয়াঙ্গুনের এক বাসিন্দা বলেছেন, বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।’ এ বিষয়ে জানতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মুখপাত্রের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এর আগে জানিয়েছিল, শুধুমাত্র প্রয়োজনের সময়ই বলপ্রয়োগ করছে নিরাপত্তাবাহিনী।

শনিবার দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সহিংসতায় অন্তত চার বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি ঘটে। “অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটিতে নিরাপত্তাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে মোট প্রাণহানির সংখ্যা ২৪৭ জনে পৌঁছেছে” মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বলছে, গত বছরের ৮ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি ক্ষমতায় আসায় তারা অভ্যুত্থান ঘটাতে বাধ্য হয়েছে। যদিও দেশটির নির্বাচন কমিশন কারচুপির অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করেছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকার দেশটিতে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনও তারিখ জানায়নি। অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি ও তার দলের জ্যেষ্ঠ অনেক নেতাকে আটক করে সেনাবাহিনী। তখন থেকে অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি রয়েছেন সু চি। অবৈধভাবে ওয়াকি-টকি আমদানি ও ব্যবহার এবং করোনাভাইরাস বিধি লঙ্ঘনসহ ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে অন্তত চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

শিরোনাম