মোঃ উজ্জল হোসেন ঃঃ
বিংশ শতাব্দীর মধ্য ভাগ পর্যন্ত বায়রা ছিল মানিকগঞ্জ মহকুমার বর্ধিষ্ণু গ্রাম। শিক্ষা-দীক্ষায় এ গ্রামের সন্তানেরা ছিল অগ্রগামী। বহু কৃতি সন্তানের জন্ম এই গ্রামে। এ গ্রামের ধলেশ্বরীর কোল ঘেঁষে মধ্য শতাব্দীতে গড়ে উঠেছিল অর্ডেনগঞ্জ শহর। গত শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত এ গ্রামে ছিল পাটের অফিস, টেলিফোন অফিস, টেলিগ্রাফ অফিস। এই বায়রা গ্রাম থেকে পাট রপ্তানী হতো সুদূর বিলেতে। ধলেশ্বরীর নাব্যতা শুকিয়ে যাওয়ায় পাটের কারবার নারায়ণগঞ্জে স্থানান্তরিত করা হয়।
বায়রা গ্রামে ঊনবিংশ শতাব্দীর যে বাড়িগুলো আছে তার মধ্যে ঐতিহাসিক বায়রা জজ বাড়ি একটি। এই বাড়ির তিনজন সদস্য ব্রিটিশ সরকারের এদেশীয়দের জন্য সর্বচ্চ পদ জেলা জজ হওয়ার গৌবর অর্জন করায় এ বাড়ির নাম জজ বাড়ি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
এ বাড়ির মালিক ছিলেন শশীভূষণ সেন। তার বাড়ি ছিল ফরিদপুরে। তিনি মামা বাড়ি বায়রায় থাকতেন। পড়াশোনা শিখে ব্রিটিশ প্রশাসনের এদেশীয়দের জন্য সর্বোচ্চ জেলা জজ হন। তার দুই পুত্র গিরীজাভূষণ ও বিনয়ভূষণ ও ব্রিটিশ সরকারের সর্বচ্চ পদ জেলা জজ ছিলেন। এই তিন জজের মধ্যে গিরীজাভূষণ সেনের সুনাম বেশি ছিল। তিনি একটা গুরুত্বপূর্ণ মামলায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে ‘রায়বাহাদুর খেতাব লাভ করেন।
এই বাড়ির সন্তানেরা মহাসুখে কলকাতায় বসবাস করলেও দূর্গাপূজার সময় নিজ গ্রাম বায়রার প্রতিবেশীদের জন্য নৌকা বোঝাই করে উপহার সামগ্রী ও গরিবদের জন্য অন্নবস্ত্র নিয়ে আসতেন। তারা কলকাতায় থাকলেও তাদের মনে কোন অহংকার ছিল না। তারা গ্রামের মানুষকে মুক্তহস্তে দান করতেন। এই জজ বাড়িতে প্রতি বছর মহাসমারোহে দূর্গা পূজা হতো। দূর্গা পূজার সময় জজ বাড়ি কয়দিন গানবাজনা ও নানা উৎসব হতো। মনে প্রাণে অসাম্প্রদায়িক জজ বাড়ির সন্তানেরা যতদিন বায়রা থাকতেন ততদিন গ্রামটি খেলাধূলা ও সংস্কৃতি চর্চায় মুখরিত থাকতো।
বর্তমানে জজ বাড়িটি বায়রা ইউনিয়ন ভূমি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছবি-সংগৃহীত