মো.আলতাফ হোসেন ঃঃ
গলঘেসিয়া নদী নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২২ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক গলঘেসিয়া নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২৬। এটি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । গলঘেসিয়া নদীটি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার আশাশুনি ইউনিয়নে প্রবহমান সাপমারা-হাবড়া (খুটিকখালি) নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। অতঃপর এর একই জেলার একই উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে খোলপেটুয়া নদীতে পতিত হয়েছে।নদীটির কোনো শাখা-প্রশাখা নেই। এটি খুবই অপ্রশস্ত একটি নদী। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার নদী হওয়ায় নদীতে জোয়ার ভাটার প্রভাব আছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা”পাউবো” বাংলাদেশের নদীগুলোকে সংখ্যাবদ্ধ করেছে এবং প্রতিটি নদীর একটি পরিচিতি নম্বর দিয়েছে। এর ফলে তাদের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে নদীর সংখ্যা এখন ৪০৫ টি। পাউবো কর্তৃক নির্ধারিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১০২টি) উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী (১১৫টি), উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী (৮৭টি), উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের নদী (৬১টি), পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের নদী (১৬টি) এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী (২৪টি) হিসেবে বিভাজন করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের একটি জেলার নাম সাতক্ষীরা। সুন্দরবনের কোল ঘেষে অবস্থিত এ জনপদের ভূ-প্রকৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে হলে তার নদ-নদী, প্রাচীন স্থাপত্য, দিঘি ইত্যাদি সম্পর্কে জানা দরকার । বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে বিষয়টির মুল্য অনেক বেশি । যে জলধারা পাহাড় হ্রদ প্রভৃতি থেকে উৎপন্ন হয়ে বিভিন্ন জনপদের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে নদী বলা হয়। তবে পন্ডিতেরা এ ধরণের জলস্রোতের কমপক্ষেচারক্রোশের অধিকদূর প্রবাহমান থাকার কথা বলেছেন। আর দুই মাইলের কিছু বেশি (৮০০ হাত) পথকে একক্রোশ বা কোশ বলা হয়। ব্যাকরণগত দিক দিয়ে একে আবার দুভাগে ভাগ করা যায় । যে বহমান জলধারার নামের সাথে পুরুষবাচক প্রত্যয় (অ) যুক্ত আছে তাকে নদ বলা হয়। যেমন-ব্রক্ষ্মপুত্র,কপোতাক্ষ । আর যার নামের সাথে স্ত্রীবাচক প্রত্যয় (আ.ই.ঈ) যুক্ত আছে তাকে বলা হয় নদী। যেমন পদ্মা, ইছামতি, ভাগীরথি । নদী আমাদের ভূ-প্রকৃতির যেমন: একটি উল্লেখযোগ্য দিক তেমনি নদীতে নিয়ে রচিত হয়েছে নানাবিধ সাহিত্যকর্ম (গান, কবিতা ইত্যাদি) ।
সাতক্ষীরা জেলা একসময় প্রচুর নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়ে পূর্ণ ছিলো । যার অনেকগুলো আজ নাব্যতা হারিয়ে বিলীন হয়ে গেছে । কোথাও কোথাও ভরাট হয়ে চাষাবাদ চলছে । এই সাতক্ষীরার ওপর দিয়ে উপমহাদেশের বিখ্যাত নদী গঙ্গা-পদ্মার বেশ কয়েকটি শাখা নদী বহুমুখীত হয়ে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । এছাড়াও জেলার বুক চিরে বয়ে গেছে অসংখ্য নদ-নদী। নাব্যতা হারিয়ে শীর্ণ নালায় পরিণত একসময়ের খরস্রোতা গলঘেসিয়া নদী। সুজলা-সুফলা,শস্য-শ্যামলা এই বাংলা মায়ের শীতল বক্ষ চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদ ও নদীর অববাহিকা। নদীনির্ভর বাংলা কথাশিল্পের ধারাবাহিকতায় অবিস্মরণীয় কীর্তি নদী। আদিকাল থেকে জীবন ও জলের প্রবাহ একাকার, অবিচ্ছিন্ন। ধমনীতে যেমন রক্ত প্রবাহ জরুরি তেমনি দেশকে বাঁচাতে হলে সে দেশের বুকের ভেতর নদী প্রবাহ জরুরি।
শাসনের ফলে মরতে বসেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জনপদ সাতক্ষীরার ছোট-বড় ২৭টি নদ-নদী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেহাল দশা গলঘেসিয়ার। নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও জোয়ার-ভাটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার অধিকাংশ নদী তার গতিপ্রকৃতি হারিয়ে ফেলেছে। কপোতাক্ষ, বেতনা, কাকশিয়ালী, মরিচ্চাপ, বলুয়া, যমুনা, সোনাই, গুতিয়াখালী, সাপমারা,গলঘেষিয়াসহ অধিকাংশ নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।
অপরিকল্পিত স্লুইসগেট, চর দখল করে ইটভাটা তৈরি এবং নদী শাসন করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে সাতক্ষীরার ২৭টি ছোট-বড় নদীর অধিকাংশই মৃতপ্রায়। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে জেলার প্রধান নদ-নদী। নদীর বুকে বসতঘর, বেড়িবাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষের কারণে সাতক্ষীরার কয়েকটি নদী এরই মধ্যে মরে গেছে। কয়েকটি নদী অস্তিত্ব হারানোর পাশাপাশি মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে অনেকগুলো। মুমূর্ষু অবস্থায় গলঘেসিয়া নদী। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রথম এক দশক পর্যন্ত নদীগুলো প্রবহমান থাকলেও আশির দশক থেকে এর মরণদশা শুরু হয়। ফলে পানি নিষ্কাশনের অভাবে বর্ষা মৌসুমে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বছরে চার-পাঁচ মাস জলাবদ্ধতা স্থায়ী থাকায় এ জনপদে কৃষকদের ফসল ফলানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। সুন্দরবন ও সাগরবিধৌত সুজলা-শ্যামলা সাতক্ষীরা জেলায় ২৭টি নদ-নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শহর, বন্দর ও জনপদ। স্বেচ্ছাচারীভাবে নদীর তীরে, এমনকি চর দখল করে নদীর মধ্যেও গড়ে তোলা হয়েছে বসতবাড়ি, দোকানপাট, ইটভাটা ও কৃষিখামার। এসব নদীতে একসময় বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার, গয়নার নৌকা চলতো। সে সময় নদীগুলোতে প্রবল জোয়ার ও স্রোত থাকলেও এখন তা মরা খালের মতো নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে ‘গলঘেসিয়া’ নদীর অনেক স্থানে ভরাট হয়ে গেছে । ফলে ভাটার সময় এটি দিয়ে বড় ধরণের নৌযান চলতে পারে না। এতে এ নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহি মহিষকুড় হাটও অনেকটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে
নদ-নদী এখনো প্রবাহমান রয়েছে সেসব নদনদী রক্ষার উদ্যোগ কর্তৃপক্ষকে আশু নিতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নদ-নদীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যদি নদীগুলো এভাবে তাদের অস্তিত্ব হারাতে থাকে তাহলে অচিরেই পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। যা আমাদের চিরায়ত জলবায়ুর বিরুদ্ধে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। আর এ সব কারণেই দেশের নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থেকে দখলমুক্ত করতে হবে। এ কাজে সাধারণ মানুষ কর্তৃপক্ষের পাশে থাকবে। আমাদের কৃষিভিত্তিক দেশের সেচ ব্যবস্থা অধিকাংশ নির্ভর করে আমাদের নদ-নদীর ওপর। সেচকার্য পরিচালনা এবং দেশের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নদীর গুরুত্ব সর্বাধিক। ফলে নদী রক্ষা করতে হবে। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই নদী রক্ষা করতে হবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদীপথ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় পরিবর্তন সাধিত হবে এবং ব্যবসা বাণিজ্যে গতি আসবে।
নদীনির্ভর বাংলা কথাশিল্পের ধারাবাহিকতায় অবিস্মরণীয় কীর্তি নদী। আদিকাল থেকে জীবন ও জলের প্রবাহ একাকার, অবিচ্ছিন্ন। ধমনীতে যেমন রক্ত প্রবাহ জরুরি তেমনি দেশকে বাঁচাতে হলে সে দেশের বুকের ভেতর নদী প্রবাহ জরুরি।বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদীর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা জড়িত রয়েছে। নদীর সঙ্গে আমাদের প্রাণের সম্পর্ক। নদীপথ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ। আজ যে যানজটের কারণে মানুষের জীবন থমকে দাঁড়িয়েছে, নদী পথকে আরও আধুনিকায়ন ও সড়কপথের তুলনায় গুরুত্ব দিতে পারলে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হত। আমাদের জনজীবনে নদীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে নদীকে কেন্দ্র করে। মিশরের নীলনদ যেমন মিশরের প্রাণ তেমনি আমাদের পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। বুড়িগঙ্গাসহ বিভিন্ন নদীর অবৈধ স্থাপনা দখলমুক্ত করতে নিয়মিতই অভিযান চলে। প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে দখলকারীদের বাধা কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। দেশের বহু নদীর পাড় দখল করে প্রভাবশালীরা তাদের ব্যবসা, বহুতল ভবন বানিয়ে রেখেছে। সেসব দখলকারীদের দখলকৃত স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে হবে। কারণ এসব নদ-নদীই দেশের প্রাণ। আর দেশের প্রাণ মানে দেশের মানুষের প্রাণ। মাদকের মতো এসব দখলকারীদের বিরুদ্ধেও জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। কোনোভাবেই এসব দখলকারী প্রভাবশালীদের হাত থেকে সম্পূর্ণভাবে নদী মুক্ত করতে হবে। নদ-নদী দখলকারী ব্যক্তিকে দেশের সব ধরনের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশের কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ারও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। নদীর সঙ্গে আমাদের জীবনধারার সুখ-দুঃখ জড়িত।
নদীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক চিরকালের। জীবন-জীবিকা ও সভ্যতার অগ্রগতিও ঘটেছে নদীর তীরে। সিন্ধু নদীর তীরে সিন্ধু সভ্যতা। নীল নদের তীরে মিসরীয় সভ্যতা। রাইনের তীরে জার্মান সভ্যতা। ডনভ্যানুয়েবের তীরে রুশ সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো। বাংলাদেশেরও প্রায় শহর, নগর, বাণিজ্য কেন্দ্র বিভিন্ন নদীর তীরে গড়ে ওঠে। রাজধানী ঢাকা বুড়িগঙ্গা। নারায়ণগঞ্জ শীতলক্ষ্যা। চট্টগ্রাম কর্ণফুলী। খুলনা, ভৈরব ও ময়মনসিংহ পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে গড়ে ওঠে। বাংলাদেশের সঙ্গেও নদীর সম্পর্ক নাড়ির। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ছোট-বড় ২৩০টি নদ-নদী রয়েছে। যার ৫টি আন্তর্জাতিক নদী। আর ৫৭টি দুদেশে ভেদ করেছে। দেশের অধিবাসীদের জীবনযাত্রায় এসব নদ-নদীর প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। এ দেশের জীবন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব নদ-নদীর ভূমিকা অপরিসীম।
আবহমানকাল ধরেই এ উপমহাদেশের নদীর সঙ্গে জীবন জড়িত। নদীকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে রচিত হয়েছে কালজয়ী সব গান। বারবার লেখক-কবির লেখায় স্থান পেয়েছে নদী। রচিত হয়েছে নদী ও নদীপারের মানুষের জীবনসংগ্রাম নিয়ে পদ্মানদীর মাঝির মতো কালজয়ী উপন্যাস। কিন্তু দখল, দূষণ, নজরদারির অভাবসহ নানা কারণে নদীমাতৃক দেশের আজ করুণ অবস্থা।
নদীর দেশ বাংলাদেশের আজ নদীমাতৃক পরিচয়টাই হারিয়ে যেতে বসেছে। আমরা ক্রমেই মরুভূমির দেশের বৈশিষ্ট্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সাম্প্রতিক আবহাওয়া পরিবর্তন সেদিকের ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের অভ্যন্তরে বহমান নদ-নদী ও খালসমূহ সুরক্ষায় কোনো পরিকল্পনায় না থাকায় নদীর ইতিহাস ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। নদ-নদী খনন না করায় দেশের প্রধান নদীগুলোর অবস্থা মৃতপ্রায়।নদী দখল-দূষণ নিয়ে একের পর এক ঘটনা ঘটতেই আছে। নদীর ওপর দিয়ে অত্যাচার শেষ হবে কবে? নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে নদীর ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে হাজার হাজার মানুষ। দেশের পরিবেশ দূষিত হওয়ার ফলে প্রতিবছর ক্ষতি অনেক জান ও মালের,বেহাল দশা হাজারো নদীর। এঁকেবেঁকে চলা নদ-নদীতে পাল তোলা নৌকা, দল বেঁধে মাছ ধরা আর অবারিত কৃষি জমির বাস্তবতা এখন আর নেই। পানি কমতে কমতে এখন পানিশূন্য হয়ে পড়েছে জেলার অধিকাংশ নদীতে। অস্তিত্ব নেই এ জেলার অনেক নদীর। ভয়াবহ করাল গ্রাসে রক্ষা পাচ্ছে না নদী। বিপন্ন হতে চলেছে নদীর বুকে বাস করা নানা জীববৈচিত্র্য। এখন এ নদী শুধুই ইতিহাসের সাক্ষী হতে চলছে।
হাজার হাজার বছর নদ-নদীকে কোনো মানুষের রক্ষা করার প্রয়োজন হয়নি। আজ তারা অগণিত শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত। নদ-নদী দখল আর নদীর পার কেটে বালু উত্তোলন যেকোনো অপরাধই শাস্তিযোগ্য।নদী ছিলো আপন বেগে পাগলপারা। তাকে আক্রমণ বা বাধা দেওয়ার সাধ্য ছিলো না কারও। নদ-নদী ছিলো অজাতশস্ত্র,কালের বিবর্তনে হারিয়েছে এসব নদীর নাব্যতা। দেশ এখন মরুকরণের পথে। কিছু নদী টিকে থাকলেও অপদখলে চলে যাচ্ছে।
নদ-নদী মানুষ ছাড়াও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল রয়েছে নদীতে। নদী তার আপন সৌন্দর্য হারানোর সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল বিলুপ্ত হচ্ছে। এসবকিছু প্রভাব ফেলছে জীববৈচিত্র্যে। একের পর এক নদী শুকিয়ে যাওয়ার ফলে এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের জীবনধারণে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। যেসব নদী এখনো কোনো রকমে মানুষের অত্যাচারের ফলেও টিকে রয়েছে সেসব পলি পরার ফলে তলদেশ ভরাট হয়ে আছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই দু’কূল ভাসিয়ে সময়ে অসময়ে বন্যা হয়ে দু’কূল ভাসিয়ে দিচ্ছে। আবার অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিনিয়তই সৃষ্টি হচ্ছে ভাঙনের।
অবিরাম সৌন্দর্যে আঁকা নদীমাতৃক দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। ষড়ঋতুর দেশ। এককালের প্রায় হাজার নদীর দেশ। জোয়ারভাটার দেশ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে নদীভিত্তিক সমস্যার সমাধান করতে হবে দীর্ঘমেয়াদিভাবে। এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবন, জীবিকা ও সার্বিক উন্নতি নির্ভর করে নদীর ওপর। এ কারণে নদী সমস্যাকে অত্যধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ দেশের নদী বাঁচলে,মানুষ বাঁচবে। অর্থাৎ দেশের মধ্যে প্রবহমান অন্যান্য নদ-নদীর মতো গলঘেসিয়া নদীকে বাঁচানোই এখন সময়ের দাবি।
লেখকঃ সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ (কারাতে ব্লাক বেল্ট ১ম ড্যান) সভাপতি শারীরিক
শিক্ষাবিদ সমিতি,চেয়ারম্যান গ্রিন ক্লাব,গবেষক,শিক্ষক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট