—-এইচ এম যুবায়ের মিঠু
ফিলিস্তিনের প্রধান দুটি শহর৷ একটি ওয়েস্ট ব্যাংক অন্যটি গাজা৷ ওয়েস্ট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ মুভমেন্ট। এরা সকলে ইয়াসির আরাফাতের অনুসারি। আর যে গাজা ভূখণ্ড থেকে রকেট ছোঁড়া হচ্ছে ইজরাইলের দিকে তা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। সারা বিশ্ব মূলত ফাতাহকে ফিলিস্তিনিদের বৈধ কর্তৃপক্ষ বলে মনে করে থাকে। অন্যদিকে হামাসকে মনে করে জঙ্গি সংগঠন। সব থেকে অবাক করা ব্যাপার হলো ফাতাহ আর হামাসের সম্পর্ক সাপে নেউলে! যে দেশটি বহু বছর ধরে অত্যাচারিত হয়ে আসছে কেন ফিলিস্তিন কোন কার্যত সাফল্যজনক অবস্থানে যেতে পারছে না?
ফাতাহ মুলত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত একটি রাজনৈতিক দল৷ অনেক আগে থেকে এইদলটি ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে বিদ্যমান৷ কিন্তু ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর ফাতাহ ফিলিস্তিনের অধিকার আদায়ের জন্য কার্যত কোন ব্যবস্থা আজও নিতে পারে নি৷ ফাতাহকে অর্থায়ন করে সৌদি আরব, মিশর, বাহরাইন,জর্ডান তথা আরব বিশ্বের ধনী দেশগুলো৷ অন্যদিকে হামাস হলো সশস্ত্র মিলিশিয়া ভিত্তিক দল৷ যার মূল সাহায্যকারী ইরান৷ এছাড়া কাতার ও তুরস্ক থেকে তারা অর্থ এবং অন্যান্য সহায়তা পায়।
আসলে ফিলিস্তিনে সমস্যা কি? তাদের তো মূল লক্ষ ইসরায়েলের সাথে সংগ্রাম করে তাদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র কায়েম করা৷ তাদের ভূখণ্ড ফিরিয়ে নেয়া৷ কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত মার খেয়েই যাচ্ছে৷ দখল হয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিনের অনেক এলাকা৷ ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দলটি মূলত ইসরায়েলের ও সৌদি আরবের কাছে গৃহবন্দী৷ তারা না পারছে ফিলিস্তিনের কোন উন্নয়ন করতে না পারছে ইসরায়েলের হামলা দখলদারী প্রতিরোধ করতে। সৌদি আরব যে ফিলিস্তিনের জন্য কি করবে এইটা সবার এখন জানা৷ বাস্তবতা হলো মাহমুদ আব্বাসের দল ফাতাহ এর কার্যত কোন অস্ত্র নেই৷ নেই কোন ক্ষমতা৷
কার্যত এরা ইসরায়েলের সাথে বিভিন্ন চুক্তিতে বন্দি। তারা আরব ধনী দেশগুলোর গোলামে পরিণত হয়ে গেছে অনেক আগেই৷ তাই ফিলিস্তিনের ওয়েস্ট ব্যাংক ফিলিস্তিনের হলেও তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে৷ মাহমুদ আব্বাসকে আজাইরা আব্বাস বললেও ভুল হবে না৷ এবার আসা যাক গাজার হামাসের কথায়৷ ইসরায়েল হামাসকে ফাতাহ এর মতো নানা রকম চুক্তি করতে বলেছিলো৷ কিন্তু হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এর জন্য গাজাবাসীদের অনেক মূল্যও দিতে হচ্ছে৷ গাজা এখন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ৷ গাজাকে জেলখানার মতো বানিয়ে রেখেছে ইসরাইল। ইসরায়েলের সাথে চুক্তি না করায় হামাসকে বিশ্বে জঙ্গি সংগঠন বানিয়েছে পশ্চিমারা।
তার সাথে হামাস ইরানের মিত্র। আগেই বলেছি হামাসের সব সহায়তা আসে ইরান ও কাতার থেকে৷ হামাসের সকল অস্ত্র ইরানের৷ হামাস অর্থ সহায়তা পায় কাতার থেকে৷ তারা মূলত একটি মিলিশিয়া দল৷ হামাস অনেক আগে গঠিত হলেও ২০০৫ সালে তারা ফিলিস্তিনের রাজনীতিতে আসে ৷ ২০০৬ সালে হামাস ফিলিস্তিনের নির্বাচনে জয়লাভ করে৷ কিন্তু ইরানপন্থি দল হওয়ায় ফাতাহ তাদের জয় মেনে নেয় নি৷ ফলে ফাতাহ ক্ষমতা নিয়ে টালবাহানা শুরু করলে ২০০৬ সালে ফাতাহ আর হামাসের সংঘর্ষ হয়৷ হামাস ফাতাহকে গাজা থেকে বিতারিত করে গাজার একচ্ছত্র আধিপত্য নেয়। অন্যদিকে ওয়েস্ট ব্যাংক এর আধিপত্য চলে যায় ফাতাহ এর কাছে৷ হামাস চেষ্টা করছে দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের সাথে লড়তে৷ তারা ইসরায়েলের হামলা গুলোর জবাবও দিচ্ছে৷ ফিলিস্তিনের অধিকাংশ মানুষের পছন্দ হামাসকে৷ ফাতাহ যে কিছু করতে পারবে না এটি ফিলিস্তিনের নাগরিকরা বুঝে গেছেন৷ তাই ফিলিস্তিনে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে হামাস৷ ফিলিস্তিনে তৃতীয় আরেকটি দল আছে যার নাম প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ৷ যদিও এটি হামাসের মিত্র। তবে এদের কোন রাজনৈতিক শাখা নেই৷ এরা হামাসের সাথেই যুদ্ধ করে৷
সব থেকে দুঃখজনক ব্যাপার হলো ২০০৬ সালের সংঘর্ষের পরে ফিলিস্তিনে ফাতাহ এবং হামাসের এরপরেও অনেক সংঘর্ষ হয়েছিলো এবং মানুষ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে৷ ফিলিস্তিনে এখন কার্যত মধ্যপ্রাচ্যের দুই ব্লকের ছায়াযুদ্ধ চলছে। একটি সৌদি আরব অন্যটি ইরান৷ ফিলিস্তিনিদের নিজেদের মধ্যে আন্তকোন্দল আছে ব্যাপক৷ তাই তারা আজ পর্যন্ত কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছে না ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ আমরা বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলো যতোই প্রতিবাদ করি, ফেসবুকে যতো যাই করি বিন্দুমাত্র লাভ হবে না ফিলিস্তিনিদের৷ তাদের নিজের দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে৷ প্রথমে তাদের এক হতে হবে৷ নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কমিয়ে সবাই একসাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷ না হলে ফেসবুকে কোটি কোটি হ্যাসটেগ সেভ প্যালেস্টাইন দিয়ে কোন লাভ নেই৷ ইসরায়েল তাদের অত্যাচার ও দখলদারিত্ব চালিয়ে যাবে৷ একবার ভাবুন তো ফাতাহ ওয়েস্ট ব্যাংক থেকে আর হামাস গাজা থেকে আক্রমণ চালালে ইসরায়েলীরা আরো বেশি আতঙ্কে থাকতো৷ আল আকসা মসজিদের আশে পাশেও কোন ইসরায়েলিকে পাওয়া যেত না৷ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারতো আরো সহজে৷ ইসরায়েল মূলত ফিলিস্তিনের একপক্ষকে পঙ্গু করে দিয়েছে৷ হামাসের একার পক্ষে ইসরায়েলের সাথে লড়া সম্ভব নয়৷ আন্তকোন্দল ও ক্ষমতার লোভ যে কি খারাপ জিনিস তা এই অবস্থা থেকে বুঝা যায়৷ দিন শেষে একটাই কথা বলবো আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক৷ আল্লাহ ফিলিস্তিনিদের সাহায্য করুক।