মো.আলতাফ হোসেনঃঃ
নদীনির্ভর বাংলা কথাশিল্পের ধারাবাহিকতায় অবিস্মরণীয় কীর্তি নদী। জল ও জীবনের ঐকতান একাকার হয়ে যেনো বয়ে গেছে বিভিন্ন নদী। নাটোর জেলার নদীর প্রায় সব ক’টিই এখন আর কলস্বরা নেই। তার মধ্যে বেসানী নদী একটি। পলির প্রভাবে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে নদীর দুই পাশ ভরাট করায় এর প্রশস্ততা সংকুচিত হচ্ছে এবং নদীর গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। একসময় এদেশের মানুষের জীবিকার উৎস ছিলো নদী। এই নদীগুলো কৃত্রিম কারণে ও সময়ের ধারায় আজ বিপর্যয়ের সম্মুখিন। তেমনি কৃত্রিম কারণে ও সময়ের ধারায় আজ বিপর্যয়ের সম্মুখিন একসময়ের প্রমত্তা মুসাখান নদীটি।
মুসাখান নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নাটোর এবং রাজশাহী জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক মুসাখান নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৯৮।
নাটোর জেলার উল্লেখযোগ্য নদ-নদীর মধ্যের রয়েছে মুসাখান, নন্দকুঁজা, বারনই, গোদাই, বড়াল, খলিসাডাঙ্গা, গুনাই, নারদ নদ। মুসাখান নদী নদী নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলা থেকে শুরু হয়ে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা হয়ে আবার নাটোর জেলার সদর উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মার শাখা নদী বড়াল থেকে এই নদীটি উৎপন্ন হয়েছে। বড়াল নদীটি বাগাতিপাড়া উপজেলা দিয়ে নাটোর জেলায় প্রবেশ করেছে। পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে এই নদীটি বাগাতিপাড়া উপজেলার হাঁপানিয়া গ্রামের কাছে এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। এর ভিতরে মূল স্রোতধারটি বড়াল নামে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে। এর অপর শাখাটি মুসাখাঁ নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়েছে। মুসাখাঁ নদীটি পরে রাজশাহীর পুঠিয়ার ঝলমলিয়া, কানাইপাড়া, নাটোরের আগদিঘা ছাতনি হয়ে ত্রিমোহনী নামক স্থানে এসে গদাই নাম ধারণ করে আত্রাই নদীর সঙ্গে মিশে চলন বিলে পড়েছে। নদী গবেষকদের ধারণা মুসা খান প্রাকৃতিক কোনো প্রবাহ নয়। ষোড়শ শতাব্দীর শেষে কিংবা সপ্তদশ শতাব্দীর একেবারে শুরুতে ইশাখাঁর ছেলে মুসা খাঁ বড়াল থেকে নারদ নদের সঙ্গে সহজ যোগাযোগ স্থাপনের জন্য সামরিক প্রয়োজনে এটি খনন করেছিলেন। পরে ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দের প্লাবনে এটি স্থায়ী নদীর রূপ লাভ করে।
পদ্মার শাখা বড়াল। আর বড়ালের শাখা মুসা খান। এক সময় মুসাখান নদী দিয়ে কলকাতায় পাল তোলা বড় বড় নৌকা ও জাহাজ যেত। এখন তা শুধুই অতীত। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট নির্মাণ করায় মুমূর্ষু হয়ে পড়ে মুসাখান নদী। এর পর বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই নদীকে প্রকল্পের স্বার্থে ‘খাঁড়ি’ উল্লেখ করে নির্মাণ করেছে ক্রসড্যাম। এতে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে এ নদী পরিণত হয়েছে পুকুরে। আবার রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদ-নদীর বই ও নকশা থেকে জানা যায়, পদ্মার শাখা নদী বড়াল থেকে জন্ম মুসাখান নদীর। নদীটি উত্তরে হোজা, বারনই ও গদাই হয়ে মিশেছে আত্রাই নদীতে। রাজশাহীর শাহপুরে পদ্মা থেকে উৎপন্ন নারোদ নদী ৩৮ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে পুঠিয়ার বারইপাড়ায় এসে মিলিত হয়েছে মুসা খানের সঙ্গে। সেখান থেকে পূর্ব দিকে আরও ৫৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে নাটোর দিয়ে নারোদ মিশেছে চলনবিলে। কথিত আছে, পুঠিয়ার রাজারা মুসা খান নদীতে বড় বড় নৌকা ভাসিয়ে পদ্মা হয়ে যাতায়াত করতেন কলকাতায়। নদীর সেই গভীরতা আর স্টোত নিয়ে এখনও প্রবীণদের মুখে গল্প শোনা যায়।
মুসা খান নদীটি এখনও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মানচিত্রে আছে ভালোভাবেই। এ প্রসঙ্গে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, ‘নদীটিতে নাব্য না থাকায় খাল হিসেবে চিহ্নিত করে উপজেলা পর্যায় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, ‘এক সময় বন্যা থেকে বাঁচতে নদীতে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন এর প্রয়োজনীয়তা ছিলো। এবার স্লুইস গেট খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মুসা খান একটি ঐতিহাসিক নদী। এটা কখনোই খাঁড়ি নয়। নদীতে কোনো স্থাপনা থাকলে তা উচ্ছেদের জন্য নদী কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
এলাকাবাসীরা জানান, ‘নদীটিকে কিসের স্বার্থে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খাঁড়ি বলেছে, তা তারাই ভালো জানে। ক্রসড্যাম করায় আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। নদী মরে যাওয়ায় আর নৌকা চলে না। নদীপথে আগে কম খরচে সহজ যোগাযোগ ছিল। মালপত্র পরিবহনে খরচ কম হতো। একই এলাকার কৃষকরা বলেন, ‘বন্যার পানিতে আগে পলি আসত। ভালো ফসল হতো। এখন সার-কীটনাশক লাগে। তখন লাগত না।’ নদী মরে যাওয়ার জন্য তারাও স্লুইস গেট এবং বরেন্দ্র উন্নয়নের ক্রসড্যামকে দায়ী করেছেন।
রাজশাহীর মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বহসংখ্যক নদী। শাসনের নামে মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া হয়েছে প্রবহমান অনেক নদী । জেলার ১০টি নদীর মধ্যে মানুষ এরই মধ্যে সাত নদীর নাম ভুলতে বসেছে। কিন্তু হারিয়ে যাওয়া নদীগুলো দখলমুক্ত করতে বা এর প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আকুতি জানাচ্ছে গ্রামবাসী।
এক সময়ের প্রবলা, প্রমত্তা, প্রগলভা পদ্মা, যমুনা, করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর, নন্দকুজা, বেশানী, আত্রাই, গুমানী, গুর, ফকিরনী, শিববারনই, নাগর, ছোট যমুনা, মুসাখান, নারদ ও গদাইসহ উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদ-নদীগুলো পানি প্রবাহ এলাকা শুকিয়ে নদী বক্ষে মাইলের পর মাইল বিরাজ করছে ধুঁ-ধুঁ বালুচর। ভারতের মেরুকরণের প্রক্রিয়ার যাঁতাকলে নিঃষ্পেষিত হয়ে উত্তরাঞ্চলের অসংখ্য নদ-নদী বক্ষে বর্তমানে পর্যাপ্ত পানি নেই। আর শাখা নদীগুলোর অবস্থা আরও করুণ। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নীচে নেমে গেছে। ফলে এ অঞ্চলের সেঁচ কার্যক্রম বিঘ্নিত হবার শংকার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, প্রতি বছরের শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই এ অঞ্চলের যমুনা, পদ্মা, করতোয়া, বড়াল, হুরাসাগর, নন্দকুজা, বেশানী, আত্রাই, গুমানী, গুর, ফকিরনী, শিববারনই, নাগর, ছোট যমুনা, মুসাখান, নারদ ও গদাইসহ উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী ও এর শাখা প্রশাখাসহ খাল-বিল শুকিয়ে যায়। ফলে নদ-নদী বিধৌত উত্তরাঞ্চলবাসীর শুরু হয় দুঃখ দুর্দশার পালা। প্রকৃতি নীর্ভর কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের বিস্তুর্ণ এলাকা কালের আবর্তনে সময়ের পরিধিতে ক্রমেই মিনি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। দু’চোখ নদী বক্ষের যেদিকে যায় সেদিকেই দেখা যায় ধূঁ-ধূঁ বালুচর। প্রতিবেশী দেশ ভারত নদ-নদীগুলোর স্বাভাবিক গতিপথ রূদ্ধ করে দেওয়ায় সুজলা-সুফলা, শষ্য-শ্যামলা বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে মরু অঞ্চলে পরিণত হতে চলেছে। উত্তরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে নদীগুলো অবস্থান করায় মরুকরণের কু-প্রভাব এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশকে করছে ভারসাম্যহীন। এসব কারণে এ অঞ্চলের নদীগুলোর গতি প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটছে। আমরা হারাতে বসেছি আমাদের অনেক গ্রামীন ঐহিত্য। আবহমান কাল থেকে গ্রামীন জনপদের মানুষের প্রিয় সুস্বাদু দেশী মাছ এখন সোনার হরিণের মতো। এখন আর দেখা যায়না গ্রামীণ ঐহিত্যের অনুসঙ্গ নৌকা বাইচ, খরা জাল, সূতি ফাঁদ, সেঁচের মাধ্যম দাঁড়। মৎসভান্ডার সংকুচিত বা শুকানোর ফলে অনেক মৎসজীবী বর্তমানে বেকার। আবার অনেকেই পেশার পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। তেমনি আমাদের চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে একসময়ের মুসাখান নদীটি। উত্তাল প্রমত্তা এই নদীটি এখন সরু নালায় পরিণত হয়েছে।
পানিসম্পদ বিষয়ক গবেষকদের মতে, ভারতের মরুকরণ প্রক্রিয়ার যমুনা, করতোয়া, বরাল, হুরাসাগর, নন্দকুজা, বেশানী, আত্রাই, গুমানী, গুর, ফকিরনী, শিববারনই, নাগর, ছোট যমুনা, মুসাখান, নারদ ও গদাইসহ উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো নদীর পানির স্তর ভূগর্ভস্থ পানির স্তরেরও নীচে নেমে গেছে। সরাসরি এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে অসংখ্য শাখা নদী ও নালা গুলোতে। এ দুরবস্থার আরও একটি কারণ হচ্ছে যমুনা নদী অববাহিকায় অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিমাত্রায় অগভীর নলকূপের ব্যবহার। এতে মরা খালে পরিনত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদী, চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষি, মৎসসহ প্রকৃতি নীর্ভর খাতগুলো ।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের এমন কোন জনপদ নেই যেখানে নদীর অস্তিত্ব ছিলো না। আবহমানকাল ধরেই নদী বাংলাদেশের জনজীবনের আনন্দ-বেদনা সুখ দুঃখের সাথে ওতপ্রোতভাবে জাড়িয়ে ছিল। কিন্তু এখনকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে সব। বিগত ষাট বছরে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি থেকে বিদায় নিয়েছে অনেক নদনদী। বিদায় নিতে চলছে একসময়ের উত্তাল প্রমত্তা মুসাখান নদীটি। কালের বিবর্তনে প্রিয় মাতৃভূমি আজ নদীমাতৃক দেশ হিসেবে তার বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছে। অসংখ্য নদ- নদীর সমন্বয়ে গড়ে উঠা বাংলার জনপদ তার চিরচেনা সেই রুপ হারিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ভিন্নপথে। হাজার বছরের বাঙালী সংস্কৃতির সাথে কী অপরুপ মিল ছিল এইসব নদ-নদীর। বাঙালীর জীবন-যাত্রায় ভীষণভাবে জড়িয়ে থাকা এই নদ- নদীকে কেন্দ্র করে এখানে-ওখানে গড়ে ওঠেছে হাজারো বাড়িঘরসহ নানা বাণিজ্যকেন্দ্র।
সভ্যতার ঘোড়াপত্তন যেমনটা হয়েছিল নদীকে কেন্দ্র করে, তেমনি বাংলা অঞ্চলের সভ্যতাও গড়ে উঠেছিলো নদ- নদীকে ঘিরেই। বিশেষত ধান, মাছ, সবজী উৎপাদন সর্বোপরি বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে নদীরই বদৌলতে। আমরা আজ যে ইলিশ মাছ নিয়ে গর্ব করি তা কিন্তু নদীরই দান। আর একটি কথাতো বহু বছর ধরে প্রচলিত আছেই যে, আমরা মাছে ভাতে বাঙালী। যদিও নদীর সাথে সাথে আমাদের সে ঐতিহ্যও আজ হারাতে বসেছে। যেসব নদ- নদীর সংম্পর্শে এসে এদেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে, সেসব নদ- নদীই আজ হারিয়ে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত প্রায় তিন দশকে অসংখ্য নদ- নদী দেশের মানচিত্র থেকে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর এই বিলীন হওয়া যতটা না প্রাকৃতিক কারণ, তারচেয়ে বেশি মানবসৃষ্ট। তেমনি একটি নদী মুসাখান নদী। যে নদীতে নানা প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দখল-দূষণে হারিয়ে যেতে বসেছে এর চিহ্ন। মানুষ তার হীন স্বার্থে একের পর এক নদ- নদীগুলোকে হত্যা করছে। আজকে আমাদের দেশে নদী হত্যা যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে।
মানুষের অমানবিক কাজের কারণে নদ-নদীগুলো আজ মরে যাচ্ছে। পানির সংকটের ফলে নদীপাড়ের মানুষ তাদের জীবিকা হারাচ্ছে। মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে ধানসহ কৃষিপণ্য উৎপাদনে। বলা যায় নদীর মৃত্যুতে ভয়াবহ পরিণতি বরণ করতে হবে বাংলাদেশকে। আমাদের মনে রাখতে হবে, খাল, নদ- নদী বাঁচানো না গেলে আমাদের কৃষি-অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ সবকিছুই বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এসব থেকে রক্ষা পেতে হলে, চারদিকে নদ- নদী দখল ও দূষণের যে মহোৎসব চলছে তা বন্ধ করতে হবে। গ্রীষ্মকালে নদীগুলোর পানি শূন্যতা দূর করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যৌথ আলোচনা চালাতে হবে। প্রাপ্ত পানির নেয্য হিস্যা বুঝে নিতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইনকে কার্যকর করতে হবে।
বহুকাল থেকেই দেশজুড়ে বিস্তুত অসংখ্য নদ-নদী। দেশের প্রতিটি নদীই একেকটি সম্ভাবনা। এই নদ-নদীগুলো দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। কৃষিপ্রধান দেশে কৃষি, মৎস্যসহ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদ-নদীর রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। শুধু তাই নয়, জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, যোগাযোগ ও পরিবহনব্যবস্থা অনেকটাই নদ-নদী কেন্দ্রিক। দেশের অর্থনীতির সম্ভাবনাগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে নদ-নদীর নাব্যতার সাথে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও বতর্মানে দূষণ আর প্রভাবশালীদের দখলে অস্তিত্ব সংকটে দেশের অনেক নদী। মুসাখাঁ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের একটি নদী। পদ্মার শাখা নদী বড়াল থেকে এই নদীর উৎপত্ত, হয়ে নাটোর জেলা দিয়ে প্রবেশ করে রাজশাহীর পুঠিয়া, ঝলমলিয়া দিয়ে চলন বিলে পরেছে। অতীতে এই নদী পথ কে ব্যবহার করে বনিকরা ব্যবসা বানিজ্য করতো, নদীতে অনেক শ্রোত থাকলেও বর্তমানে দূষণ আর নদী পাড়ের প্রভাবশালী মানুষের কারনে দিন দিন প্রশস্ততা অনেক কমে এসেছে নদীর মধ্যে গড়ে তুলেছে কাঁচা পাকা অসংখ্য দোকান পাট এবং সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনা ফেলার কারনে ভরাট হচ্ছে নদী। এমন ভাবে ভরাট হতে থাকলে অস্তিত্ব হারাবে নদীটি। অল্প বৃষ্টিতে সৃষ্টি হবে জলবদ্ধতা। তাই সচেতন মহলের দাবি অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও সংস্কার করলে প্রান ফিরে পাবে নদী, সুন্দর হবে প্রকৃতি।
দিন পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজশাহীর মুসাখাঁ নদীর অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বর্ষায় কোথাও কোথাও ডোবার অস্তিত্ব মিললেও মিলে না নদীর প্রবাহ। বর্তমানে নদীটি মরা খালে পরিণত হয়েছে। খরা মৌসুমে নদীতে চলে চাষাবাদ। এ অবস্থায় নদীটি খনন করে পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
আদিকাল থেকে নদী তার পলি দিয়ে অঞ্চলকে করেছে সুজলা-সুফলা। সময়ের বিবর্তনে নদীগুলো হারিয়েছে তার জৌলুস।নদীর সঙ্গে মানুষের দীর্ঘকাল ধরে যে আত্মার সম্পর্ক ছিল তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়া এমনি একটি নদীর নাম মুসাখান নদী। জেলার ঐতিহ্যবাহী মুসাখান নদীটি আজ মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে। পানিতে থৈ থৈ করত সেখানে আজ সবুজ ফসলের সমাহার। বর্ষা মৌসুম ছাড়া বছরের অধিকাংশ সময়ই পানিশূন্য থাকে নদীগুলো। নদীর বুক চিরে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, দখলসহ নানা কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে।
নদ-নদী সুরক্ষা নিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে এখনো তৎপরতা দেখা যায় না অনেকেরই। নদী বেদখল হচ্ছেই। দূষণে প্রাণ হারাচ্ছেই সেই নদ-নদী। পৃথিবীতে প্রাণী জগৎ বেঁচে ধমনীতে যেমন রক্ত প্রবাহ জরুরি তেমনি দেশকে বাঁচাতে হলে সে দেশের বুকের ভেতর নদী প্রবাহ জরুরি। নদীর রূপ ও রূপান্তর নিয়ে সাহিত্য হয়নি, এমন কোনো ভাষা নেই।এমনকি লিপিহীন ভাষাতেও নদী নিয়ে রচিত হয়েছে বিস্তর উপাখ্যান। সাহিত্যের সব শাখায় কমবেশি এসছে নদী প্রসঙ্গে।বস্তুত মানুষের সমস্ত বিশুদ্ধ কল্পনায় নদী বা নদীবিশেষের প্রসঙ্গ সগর্বে উপস্থিত। জীবনের প্রাণ শক্তি নদীর সাথে। কালের আবর্তনে দখলের কবলে পড়া বিভিন্ন প্রবহমান নদ-নদীর মতো মুসাখান নদীকে বাঁচানোই এখন সময়ের দাবি।
লেখকঃ সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ(কারাতে ব্লাক বেল্ট ১ম ড্যান),সভাপতি শারীরিক শিক্ষাবিদ সমিতি,
চেয়ারম্যান গ্রিন ক্লাব,শিক্ষক, গবেষক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট