মেজর হাফিজ উদ্দিন ঃঃ
রাত ১২টায় তুমুল গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। দূর থেকে মিলিত কন্ঠে স্লোগানের শব্দ ভেসে এল, ‘সিপাই সিপাই ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই।’ পার্শ্ববর্তী সাপ্লাই কোর এবং নৌবাহিনীর একটি সংস্থা থেকে মাইকে স্লোগানের শব্দ পরিষ্কারভাবে শুনতে পাচ্ছিলাম। স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।
রাত দুটোর দিকে মেজর মুহিউদ্দিনের নেতৃত্বে ২য় ফিল্ড আর্টিলারির একদল সৈনিক বিনা বাধায় জেনারেল জিয়ার বাসভবনে প্রবেশ করে। সৈনিকেরা ‘জেনারেল জিয়া জিন্দাবাদ, সিপাই সিপাই ভাই ভাই’ স্লোগান দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত জেনারেল জিয়াকে কাঁধে তুলে নেয় এবং সেকেন্ড ফিল্ডের অফিসে নিয়ে আসে। পরবর্তীকালে জনমনে একটি ধারণা জন্মেছে, কর্নেল তাহের জিয়াকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করেন। এটি সম্পূর্ণ ভুল, তাহেরের অনুগত অর্ডন্যান্স সাপ্লাই, সিগন্যাল কোরের সদস্যদের পক্ষে অভিযান চালিয়ে পদাতিক বাহিনীর বেষ্টনী থেকে জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব ছিল না। ১৫ আগস্টের অপারেশনে অংশগ্রহণকারী ল্যান্সার, ২য় ফিল্ডের ডেসপারেট সৈনিকেরা নিজেদের বাঁচার তাগিদেই জিয়াকে মুক্ত করেন।
মেজর মুহিউদ্দিন ও তার সেনাদল পাকিস্তান প্রত্যাগত, তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা তাহেরের কোন পূর্ব যোগাযোগ ছিল না। ’৭৫ সালে সেনাবাহিনীর মূলধারায় তিন বছর আগে অবসর নেওয়া তাহের অনেকটাই অপরিচিত ছিলেন, সেনানিবাসে কোনো ইউনিটে ১০ মিনিট অবস্থান করার মতো সামর্থ্য তাঁর ছিল না। মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে জাসদ নেতারা তাহেরের বিশাল ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছেন, যা বাস্তবতার কষ্টিপাথরে টেকে না।
সংখ্যাগত বিচারে দুর্বল হলেও তাহেরের নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার তৎপরতা ৭ নভেম্বর সেনানিবাসে বারুদের স্তূপে দেশলাইয়ের কাঠি সংযোগের ভূমিকা পালন করেছে নিঃসন্দেহে। জিয়া মুক্ত হওয়ার ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই তাহেরের ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়, সেনা চেইন অব কমান্ডের বলে বলীয়ান জিয়া মুহুর্তের ফুৎকারে উড়িয়ে দেন বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও তার নেতাকে। জিয়া ৪র্থ বেঙ্গলের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমিনুল হক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী এবং কয়েকজন আস্থাভাজন অফিসারকে ২য় ফিল্ডে ডেকে নেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেন।