চকরিয়ায় প্রবল বর্ষণে ১০৫ গ্রাম প্লাবিত

 

মো: কফিলউদ্দিন,চকরিয়া (কক্সবাজার) ঃঃ
প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত হয়েছে। ঢলের পানিতে ১০৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সুরাজপুর-মানিকপুর থেকে লামার ফাইতং সড়কের একটি অংশ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনাখালীর ইউনিয়নের মাতামুহুরি নদীর বেড়িবাঁধের কইন্যারকুম, মরংঘোনা ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাগলিরবিল বগাছড়ি খালের বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে।

মঙ্গলবার ও বুধবারের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের চাপে পানির তোড়ে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে উপজেলার ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া পৌরশহরের নিম্নাঞ্চলও পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে চকরিয়ার এসব ইউনিয়নে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানির চাপে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালীর ইউনিয়নের মাতামুহুরির কইন্যারকুম ও মরংঘোনায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। অন্যদিকে ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পাগলিরবিল বগাছড়ি খালের বাঁধ ভেঙে যায়। প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হচ্ছে সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, বমুবিলছড়ি, চিরিংগা, পূর্ব বড়ভেওলা, পশ্চিম বড়ভেওলা, কোনাখালী, বিএমচর, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা ও কৈয়ারবিল। প্লাবিত হওয়া ইউনিয়নগুলোর লোকজন নৌকা নিয়ে পারাপার হচ্ছে। এতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বার আউলিয়ানগর গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি তলিয়ে গেছে। ওই গ্রামের জনসাধারণ পাশের ইউনিয়ন লক্ষ্যারচর জিদ্দাবাজার থেকে ডিঙি নৌকা নিয়ে পারাপার করছেন ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের বার আউলিয়ানগর গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি তলিয়ে গেছে। ওই গ্রামের জনসাধারণ পাশের ইউনিয়ন লক্ষ্যারচর জিদ্দাবাজার থেকে ডিঙি নৌকা নিয়ে পারাপার করছেন।

উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, চকরিয়াসহ আশপাশের উপজেলায় গত চার দিন ধরে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে উজানের বান্দরবান জেলার আলীকদম ও লামা উপজেলাও। এতে মাতামুহুরি নদী ও খাল-ছড়ায় পানি বেড়েছে। চকরিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাতামুহুরি নদীর ৬৫ নম্বর পোল্ডারের ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। পৌরশহরের ভাঙারমুখ, আমাইন্যারচর, নামার চিরিংগা এলাকায় মাতামুহুরি নদীর তীর উপচে পানি ঢুকছে। নদী ভাঙন ও পাহাড় ধসের আশঙ্কায় জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল নামার কারণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানি বাড়ছে। অধিকাংশ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে কোথাও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৮২ টন চাল দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও এক শ বস্তা চিড়া ও প্রায় এক হাজার কেজি গুড় নিয়ে শুকনো খাবার বিতরণের জন্য প্যাকেট করার হচ্ছে।’

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, ‘মাতামুহুরি নদীতে পাহাড়ি ঢলের কারণে ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের উত্তর মানিকপুর ও সুরাজপুরের ৭টি ওয়ার্ডই প্লাবিত হয়েছে। ফাইতং ও মানিকপুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে আরও একদিন বৃষ্টিপাত হলে বন্যা দেখা দিতে পারে।’

চকরিয়া পৌরশহরের প্রধান কেন্দ্র নামার চিরিংগা এলাকা প্লাবিত হয়েছে, চকরিয়া পৌরশহরের প্রধান কেন্দ্র নামার চিরিংগা এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, ‘ইউনিয়নের উত্তরপাড়া, কসাইপাড়া, মিনিবাজার, প্রপারকাকারা ও জলদাশপাড়ায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। বৃষ্টি না থামলে পানি আরও বাড়বে। যদি বৃষ্টি অব্যাহত থাকে, তাহলে পাহাড়ি ঢলও নামে, তাহলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এলাকায় নদীর পাড় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় চার ট্রাক বালু দিয়ে কোনোরকম রক্ষা করা হয়েছে।’

পূর্ব বড়ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আরিফ দুলাল বলেন, ‘আনিছপাড়া, সেকান্দরপাড়া, নতুনঘরপাড়া ও আছুয়ার পাড়াসহ ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আনিছপাড়ায় বেড়িবাঁধটি ঝুঁকিতে আছে। টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পাহাড়ি ঢল নামছে, এভাবে চললে দু-এক দিনের মধ্যে বন্যা হয়ে যাবে।

পাউবো চকরিয়া উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ বলেন, ‘সকাল থেকে নদীতে পানি প্রবাহ বেশি ছিল। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে কোনাখালী ইউনিয়নের মাতামুহুরি নদীর কইন্যারকুম ও মরংঘোনা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। আগে থেকেই বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে কাজ চলছে। উজানে বৃষ্টি না হলে পানি দ্রুত নেমে যাবে।’

শিরোনাম