সংবাদ জমিন রিপোর্ট ঃঃ
দেশে করোনা সংক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল (বুধবার) থেকে সাতদিনের জন্য চলাচলে বিধিনিষেধ (কঠোর লকডাউন) ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। এমনকি বন্ধ থাকবে ব্যাংক। তবে খোলা থাকবে শিল্প-কারখানা। আর অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের বাড়ি থেকে বের হতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে ৭/৮দিন মানুষের চলাচলে বিধিনিষেধ (লকডাউন) জারি করে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যাবে না। তাদের মতে কম করে হলেও ১৪ থেকে ২১ দিনের ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি করা এবং তা কঠোরভাবে মনিটর করা প্রয়োজন। দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ দেখা দেয় গত বছর ৮ মার্চ। এরপর ১৮ মার্চ করোনা আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়। এরপর গত বছর ২৬ মার্চ থেকে সরকার মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তবে মে-জুন থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর দাবির মুখে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়।
কিন্তু এ বছর মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বাড়তে শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১এপ্রিল পর্যন্ত বিধি-নিষেধ (লকডাউন) জারি করে সরকার। কিন্তু শুরু থেকেই কারখানা খোলা রাখা এবং দু’দিন পর দোকানপাট-শপিংমলসহ গণপরিবহন খুলে দেয়ার কারণে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় সরকার আবার সাত দিনের ‘কঠোর’ নিষেধাজ্ঞা (সর্বাত্মক লকডাউন) জারি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সোমবার (১২ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে জারি করা বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে পালনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের সচিবদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিধিনিষেধগুলো হলো :
১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।
২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৩. সব ধরনের পরিবহন (সড়ক, নৌ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন- কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ করা যাবে। শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ থাকবে।
৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে।
১০. সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লেখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর পদপেক্ষ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবির নামাজে জমায়েত বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।
১৩. উপরোক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।
এদিকে, কারখানা মালিকদের চাপে এবারের বিধিনিষেধেও পোশাক কারখানা চালু থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে কম করে হলেও ১৪ থেকে ২১ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন। তাদের মতে, লকডাউন বা সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা যাই বলা হোক না কেন, তা কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে কিনা তা যথার্থভাবে মনিটর করতে হবে।