মো.আলতাফ হোসেন ঃঃ
আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। যার সঠিক সংখ্যার কোনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই। কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ২৫ জন্য নবী ও রাসূলের কথা বিদ্যমান। কোরআনের বর্ণনা মতে এ সকল নবী-রাসূলদের মধ্যে তিনি যাদেরকে নবুয়ত দানের পাশাপাশি রাজত্ব ও হিকমত প্রদান করেছেন, তাদেরে মধ্যে হয়রত সুলাইমান (আ.) অন্যতম।
হযরত সোলায়মান (আ.) ছিলেন হযরত দাঊদ (আ.) এর পুত্র ও হযরত ইয়াকুব (আ.) এর বংশধর। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বর্ণনা অনুসারে হযরত সোলায়মান (আ.) ছিলেন আল্লাহ প্রদত্ত একজন মর্যাদাবান নবী এবং প্রতাপশালী ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ। হিব্রু বাইবেল অনুসারে,তিনি ছিলেন ইসরাইলের প্রথম এবং গুরুত্বপূর্ণ একজন রাজা। তাঁর জন্ম আনুমানিক ১০১১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এবং মৃত্যু আনুমানিক ৯৩১ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এবং তার রাজত্ব কাল ছিলো প্রায় ৯৭০ থেকে ৯৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী। কথিত আছে,হযরত সোলায়মান (আ.) জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং আল্লাহ তা’য়ালার মহিমা তুলে ধরতে সেখানে পুন:নির্মাণ করে গড়ে তোলেন মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা মসজিদ।
হযরত দাঊদ (আ.)-এর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র হযরত সোলায়মান (আ.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। শেষ নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর আবির্ভাবের ন্যূনাধিক দেড় হাজার বছর পূর্বে তিনি নবী হন। হযরত সোলায়মান (আ.) ছিলেন পিতার ১৯জন পুত্রের অন্যতম। আল্লাহ পাক তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুয়তের সম্পদে সমৃদ্ধ করেন।এছাড়াও তাঁকে এমন কিছু নেয়ামত দান করেন,যা অন্য কোনো নবীকে দান করেননি। ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, হযরত সোলায়মান (আ.) -এর মোট বয়স হয়েছিলো ৫৩ বছর। তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর কাল রাজত্ব করেন (মাযহারী,কুরতুবী)। তবে তিনি কত বছর বয়সে নবী হয়েছিলেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি। শাম ও ইরাক অঞ্চলে পিতার রেখে যাওয়া রাজ্যের তিনি বাদশাহ ছিলেন। তাঁর রাজ্য তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সুখি ও শক্তিশালী রাজ্য ছিলো। কোরআনে তাঁর সম্পর্কে ৭টি সূরায় ৫১টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
‘নবী’ শব্দটি আরবি। এটি একবচন,বহুবচনে ‘আম্বিয়া’।এর অর্থ হলো অদৃশ্যের সংবাদদাতা বা সংবাদবাহক, অর্থাৎ যিনি কোনো সংবাদ বহন করেন। আল্লাহর প্রেরিত সেই মহামানবকে নবী বলা হয়, যিনি নবুয়ত প্রাপ্তির পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি নিঃস্বার্থ আহবান জানান। আর রাসূল অর্থ প্রেরিত দূত,বাণীবাহক, সংবাদদাতা, পত্রবাহক ইত্যাদি। আল্লাহর কিতাবসহ প্রেরিত এমন মহামানবকে রাসূল বলা হয়,যিনি মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি আহবান জানান। হযরত আদম (আ) থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত আল্লাহ অনেক নবী-রাসূলকে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন। মানুষ যখনই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভুলে বিপথে পরিচালিত হয়েছে,তখনই আল্লাহ নবী রাসূলদের প্রেরণ করেছেন।তাঁরা পথভোলা মানুষকে আল্লাহর পথে আসার আহবান জানান। হযরত সোলায়মান (আ.) একজন্য নবী । তাঁর জীবনে এমন অনেক ঘটনা আছে। বড় হয়ে তিনিও পিতার মতো বনি ইসরাইলিদের বাদশাহ নিযুক্ত হন। তিনি বিশাল সাম্রাজ্য অনেক বড় করেন। তাঁর ছিলো বিশাল সেনাবাহিনী। তাঁর সেনারা তিনভাগে বিভক্ত ছিলো। এর একটি বাহিনী ছিলো মানুষের মধ্যে থেকে,একটি জিনদের পক্ষ থেকে এবং আর একটি পাখিদের পক্ষ থেকে। মানব ও জিন সৈন্যরা সোলায়মান (আ.)-এর দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো। তিনি সিংহাসনে বসলে পাখি সৈনারা ডানা মেলে তাঁকে ছায়া দান করত ও বাতাস করতো। মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন,‘তারপর আমি ইব্রাহিমকে ইসহাক ও ইয়াকূবের মতো সন্তান দিয়েছি এবং সবাইকে সত্য পথ দেখিয়েছি,(সে সত্য পথ যা) ইতিপূর্বে নূহকে দেখিয়েছিলাম। আর তারই বংশধরদের থেকে দাউদ,সোলায়মান,আইউব,ইউসুফ,মূসা ও হারুণকে (হেদায়াত দান করেছি)। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে তাদের সৎকাজের বদলা দিয়ে থাকি।’ (সূরা আন-আম-৮৪)
আল্লাহ পাক হযরত সোলায়মান (আ.) তাঁর বাল্যকালেই গভীর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দান করেছিলেন। ছাগপালের মালিক ও শস্যক্ষেতের মালিকের মধ্যে পিতা হযরত দাঊদ (আ.)যেভাবে বিরোধ মীমাংসা করেছিলেন,বালক সোলায়মান তাঁর চাইতে উত্তম ফায়ছালা পেশ করেছিলেন। ফলে হযরত দাঊদ (আ.) নিজের পূর্বের রায় বাতিল করে পুত্রের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করেন ও সে মোতাবেক রায় দান করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর স্মরণ করো দাঊদ ও সুলায়মান (আ.)কে,যখন তারা একটি শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিলো,যাতে রাত্রিকালে কারু মেষপাল ঢুকে পড়েছিলো। আর তাদের বিচারকার্য আমাদের সম্মুখেই হচ্ছিলো’।‘অতঃপর আমরা হযরত সোলায়মান (আ.) কে মোকদ্দমাটির ফায়ছালা বুঝিয়ে দিলাম এবং আমরা উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম’ (সূরাঃ আম্বিয়া ২১/৭৮-৭৯)।
হযরত সোলায়মান (আ.) ছিলেন হযরত দাউদ (আ.) এর পুত্র। ছোটবেলা থেকেই জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় ভূষিত হযরত সোলায়মান (আ.) কে পরবর্তীতে যথার্থভাবেই পিতার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,‘সোলায়মান দাঊদের উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন’ (সূরাঃ নমল ২৭/১৬)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,‘আমরা দাঊদের জন্য সোলায়মানকে দান করেছিলাম। কতোই না সুন্দর বান্দা সে এবং সে ছিলো (আমার প্রতি) সদা প্রত্যাবর্তনশীল’ (ছোয়াদ ৩৮/৩০)। দাঊদ (আ.)-এর ন্যায় সোলায়মান (আ.)-কেও আল্লাহ বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন,যা আর কাউকে দান করেননি। যেমন: (১) বায়ু প্রবাহ অনুগত হওয়া (২) তামাকে তরল ধাতুতে পরিণত করা (৩) জিনকে অধীনস্ত করা (৪) পক্ষীকূলকে অনুগত করা (৫) পিপীলিকার ভাষা বুঝা (৬) অতুলনীয় সাম্রাজ্য দান করা (৭) প্রাপ্ত অনুগ্রহ রাজির হিসাব না রাখার অনুমতি পাওয়া। যেমন ১. বায়ু প্রবাহকে তাঁর অনুগত করে দেওয়া হয়েছিলো। তাঁর হুকুম মত বায়ু তাঁকে তাঁর ইচ্ছামত স্থানে বহন করে নিয়ে যেতো। তিনি সদলবলে বায়ুর পিঠে নিজ সিংহাসনে সওয়ার হয়ে দু’মাসের পথ একদিনে পৌঁছে যেতেন। যেমন আল্লাহ বলেন,‘আমি সোলায়মানের অধীন করে দিয়েছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ ও বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করতো’ (সূরাঃ সাবা ৩৪/১২)।
আল্লাহ বলেন,‘আর আমি সোলায়মানের এর অধীন করে দিয়েছিলাম প্রবল বায়ুকে। যা তার আদেশে প্রবাহিত হতো ঐ দেশের দিকে,যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি। আর আমি সকল বিষয়ে সম্যক অবগত রয়েছি’(আম্বিয়া ২১/৮১)। অন্যত্র আল্লাহ উক্ত বায়ুকে বলেছেন (ছোয়াদ ৩৮/৩৬)। যার অর্থ মৃদু বায়ু,যা শূন্যে তরঙ্গ-সংঘাত সৃষ্টি করে না। দু’টি বিশেষণের সমন্বয় এভাবে হতে পারে যে,কোনরূপ তরঙ্গ সংঘাত সৃষ্টি না করে তীব্র বেগে বায়ু প্রবাহিত হওয়াটা ছিলো আল্লাহর বিশেষ রহমত এবং হযরত সোলায়মান (আ.) এর অন্যতম মুজেযা।
হযরত সোলায়মান (আ.) এর রাজত্বের মূলে ছিলো এই আংটি। এই আংটির বলে তিনি রাজ্য শাসন করতেন। হযরত সোলাইমান (আ.) পুরো বিশ্বের বাদশাহ ছিলেন। তিনি হযরত দাউদ (আ.) এর পুত্র ছিলেন। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তিনি একটি আংটি পড়েন যার উপর ‘(ইসমে-আজম) আল্লাহর মহান নাম লেখা ছিলো’।
উল্লেখ্য যে,হাসান বাছরীর নামে যেকথা বলা হয়ে থাকে যে,একদিন ঘোড়া তদারকি করতে গিয়ে হযরত সোলায়মান (আ.) এর আছরের সালাত কাযা হয়ে যায়। সেই ক্ষোভে তিনি সব ঘোড়া যবেহ করে দেন। ফলে তার বিনিময়ে আল্লাহ তাঁকে পুরস্কার স্বরূপ বায়ু প্রবাহকে অনুগত করে দেন বলে যেকথা তাফসীরের কেতাবসমূহে চালু আছে,তার কোনো ভিত্তি নেই। এগুলি হিংসুক ইহুদীদের রটনা মাত্র।
হযরত সোলায়মান (আ.) একদা তাঁর বিশাল সেনাবাহিনীসহ একটি এলাকা অতিক্রম করছিলেন। ঐ সময় তাঁর সাথে জিন, মানুষ পক্ষীকুল ছিলো। যে এলাকা দিয়ে তাঁরা যাচ্ছিলেন সে এলাকায় বালির ঢিবি সদৃশ পিপীলিকাদের বহু বসতঘর ছিলো। এমতাবস্থায় একটা পিঁপড়াকে তিনি ভাষণ দিতে শুনলেন। তিনি ভাষণ শুনে হাসছিলেন এবং পিঁপড়াটাকে হাতের তালুতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন এমন চিৎকার চেচামিচি করে তুমি কি বলছো। তোমার কওমদের উদ্দেশ্য? উত্তরে পিঁপড়া যা বললো তা শুনে সোলায়মান (আ.) এর শরীর শীতল হয়ে গিয়েছিলো। কারণ আল্লাহ পাক একটা ছোট্ট পিঁপড়াকে দিয়ে এতো বড় জলিলুল ক্বদর নবীকে শিক্ষা দিলেন যে, দায়িত্বশীলতা কাকে বলে। পিঁপড়াটি সোলায়মান (আ.)কে বললো যে, সে ভাষণ দিয়ে বলছিলো যে, সোলায়মান ও তাঁর দলবল এই পথ দিয়ে আসছে। তোমরা দ্রুত গর্তে ঢুকে পড়ো। সোলায়মান ও তাঁর দলবলের পায়ের নিচে পিষ্ঠ হয়ে যদি একটা পিঁপড়াও মারা যায় তাহলে কাল কিয়ামতের মাঠে আমাকে গোত্র প্রধান হিসেবে তার হিসাব দিতে হবে। পিঁপড়াদের মাঝেও কি ইউনিটি। সুবহানআল্লাহ!
এ বিষয়ে কোরআনী বর্ণনা ‘সোলায়মান দাঊদের স্থলাভিষিক্ত হলো এবং বললো,হে লোক সকল! আমাকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব’ (সূরাঃ নমল ১৬)। ‘অতঃপর হযরত সোলায়মান (আ.) এর সম্মুখে তার সোনাবাহিনীকে সমবেত করা হলো জিন,মানুষ ও পক্ষীকুলকে। তারপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যুহে বিভক্ত করা হলো’ (১৭)। ‘অতঃপর যখন তারা একটি পিপীলিকা অধ্যুষিত এলাকায় উপনীত হলো,তখন এক পিপীলিকা বললো,‘হে পিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ করো। অন্যথায় সোলায়মান ও তাঁর বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে’ (১৮)। ‘তার কথা শুনে সোলায়মান মুচকি হাসলো এবং বললো,‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে ক্ষমতা দাও,যেনো আমি তোমার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি,যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পছন্দনীয় সৎকর্মাদি করতে পারি এবং তুমি আমাকে নিজ অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো’ (নমল ২৭/১৬-১৯)। সোলায়মান (আ.) কেবল পাখির ভাষা নয়, বরং সকল জীবজন্তু এমনকি ক্ষুদ্র পিঁপড়ার কথাও বুঝতেন। এজন্য তিনি মোটেই গর্ববোধ না করে বরং আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন এবং নিজেকে যাতে আল্লাহ অন্যান্য সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করেন সে প্রার্থনা করেন। এখানে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, তিনি কেবল জিন-ইনসানের নয় বরং তাঁর সময়কার সকল জীবজন্তুরও নবী ছিলেন। তাঁর নবুয়তকে সবাই স্বীকার করতো এবং সকলে তাঁর প্রতি আনুগত্য পোষণ করত। যদিও জিন ও ইনসান ব্যতীত অন্য প্রাণী শরী‘আত পালনের হকদার নয়।
কোরআনে সূরা আল-নামল এ সোলায়মান (আ.) এবং শেবার রানী সম্পর্কে আয়াত আছে। আরবরা তাকে ‘বিলকিস’ নামে অভিহিত করে। যদিও কোরআনে কোনো নামে তাকে সম্বোধন করা হয়নি। সূরা আল-নামল এর ৩২ থেকে ৪৪ নম্বর আয়াতে ওঠে এসেছে শেবার রানী ও রাজা সোলায়মানের কাহিনী। একদিন হজরত সোলাইমান (আ.) তাঁর অনুগত ‘গোয়েন্দা পাখি’ হুদহুদকে অনুপস্থিত দেখলেন। এতে রাগান্বিত হলেন এবং বললেন,যথাযথ কারণ দর্শাতে না পারলে হুদহুদ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হবে। কিছুক্ষণ পর হুদহুদ ফিরে এলো এবং রানি বিলকিসের রাজ্য,রাজত্ব, ক্ষমতা,প্রাসাদ ও সিংহাসন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিল। তিনি রানিকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠান। উত্তরে রানী বিপুল পরিমাণ উপঢৌকন প্রেরণ করেন হযরত সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে। এতে ছিলো নগদ স্বর্ণ-রৌপ্য,দাস-দাসিসহ বহু মূল্যবান সামগ্রী। সঙ্গে পাঠান ৪০ সদস্যের উচ্চতর কূটনৈতিক দল কিন্তু জাগতিক এই ধন-সম্পদের প্রতি কোনো মোহ ছিলো না হযরত সোলায়মান (আ.)-এর। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন এবং জানালেন, মানুষকে কুফর ও শিরকমুক্ত করে একত্ববাদের পথে নিয়ে আসাই তাঁর মূল চাওয়া। আল্লাহ হযরত সোলায়মান (আ.)-কে যে ক্ষমতা, ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য দান করেছেন, রানি বিলকিসের প্রতিনিধিদের সে সম্পর্কেও ধারণা দিলেন তিনি। রানী বিলকিস তার দেশের সেনাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন। সেনা সমাবেশ ঘটানো হলো এবং যুদ্ধের সর্বাত্মক প্রস্তুতিও নেওয়া হলো। রানী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘যদি হযরত সোলায়মান (আ.) আমাদের উপহার গ্রহণ করেন, যুদ্ধ না করে আল্লাহর পথে আহ্বান জানান, তাহলে বুঝতে হবে তিনি সত্য নবী। আর যদি তিনি উপহার প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে তিনি পৃথিবীর অন্যান্য রাজার মতোই একজন রাজা। আমরা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করবো। কোনো শক্তি আমাদের পরাজিত করতে পারবে না। আর তিনি যদি সত্যি নবী হন, কোনো শক্তি আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।’ রানী বিলকিসের প্রতিনিধি দল হজরত সোলায়মান (আ.)-এর দরবার থেকে ফিরে তাঁকে জানালো, আল্লাহর শপথ! তিনি কোনো সাধারণ রাজা নন। আমরা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করার শক্তি রাখি না। কোনো দিক বিবেচনায় আমরা তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ নই। প্রতিনিধিদলের উত্তর শুনে হযরত সোলায়মান (আ.)-এর সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন রানি বিলকিস। তিনি বার্তা পাঠান, ‘আমি আমার রাজ্যের নেতাদের নিয়ে আপনার কাছে আসছি। আমি আপনার রাজত্ব ও ধর্ম দুটিই নিজ চোখে দেখতে চাই।’ হযরত সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে যাওয়ার আগে তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘হে দেশবাসী! তোমরা আল্লাহর মনোনীত জাতি! তিনি তোমাদের বহু দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর নবী সোলায়মান ইবনে দাউদ (আ.)-এর মাধ্যমে তোমাদের পরীক্ষা করছেন। যদি তোমরা ঈমান আনো এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও তাহলে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ বাড়িয়ে দেবেন। আর যদি তোমরা অস্বীকার করো তাহলে তিনি তাঁর নিয়ামত ছিনিয়ে নেবেন। তোমাদের ওপর দুর্ভোগ চাপিয়ে দেবেন।’ জনসাধারণের পক্ষ থেকে জানানো হলো, সিদ্ধান্ত আপনার হাতে। অতঃপর তিনি এক লাখ ১২ হাজার সেনার এক বিশাল বাহিনী নিয়ে রওনা হন। অন্যদিকে সোলায়মান (আ.) তাঁর বাহিনীকে বললেন,‘কে রানী বিলকিসের সিংহাসন আমার সামনে উপস্থিত করতে পারবে সে উপস্থিত হওয়ার আগেই?’ তাঁর অনুগত একটি জিন রানী বিলকিসের সিংহাসন তাঁর সামনে উপস্থিত করে। তখন একটি কাচের তৈরি সুরম্য প্রাসাদও তৈরি করেন তিনি, যার নিচ দিয়ে ঝরনাধারা বয়ে যেতো। সোলায়মান (আ.)-এর দরবারে নিজের সিংহাসন দেখে হতভম্ব হয়ে যান রানি বিলকিস এবং সোলায়মান (আ.)-এর প্রতি বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশ করেন। তিনি ও তাঁর সভাসদ্যরা ইসলাম গ্রহণ করেন। প্রসিদ্ধ মতে তাঁদের বিয়ে হয়।
শেবার রানীকে ( রানী বিলকিস) নিয়ে কথা ইহুদি,খ্রিষ্টান ও ইসলাম তিন ধর্মেই আছে। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে, বর্তমান ইয়েমেনই হচ্ছে দক্ষিণ আরবের রাজ্য শেবা। কোনো কোনো ইতিহাসবিদ মনে করেন শেবা নামক রাজ্যটি আসলে পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া। রাজ্যেটির সঠিক সীমা নিয়ে বিতর্ক আছে বহুকাল ধরে। ইথিওপিয়াই ছিলো শেবা, এর পক্ষে যুক্তিদানকারীরা বলেন,শেবার রানীর রাজত্ব ছিলো অ্যাকজাম নামক রাজ্যের ওপর কিন্তু রাজা সোলায়মানের সময়ে এমন কোনো রাজ্যের অস্তিত্ব ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমনকি যখন বুক অভ কিংস সম্পাদিত হয় তখনো এমন কোনো রাজ্য ছিলো বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। আরবরা শেবার রানীকে বিলকিস আর ইথিওপিয়ানরা মাকেদা বলে সম্বোধন করে থাকে।
শেষ নবীর আগমন সম্পর্কে হযরত সোলায়মান (আ.) মক্কা শরীফে হজ্ব করতে গিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়। বায়তুল মোকাদ্দাসের নির্মাতা হযরত সোলায়মান (আ:) হজ করতে গিয়ে সেখানে অবস্থানকালে প্রতিদিন হাজার হাজার পশু আল্লাহর নামে কোরবানি করার এক বিরল নজির স্থাপন করেছিলেন,যা ইতিহাসের একটি বিস্ময়কর ঘটনা। শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ও বিদায় হজকালে একশত উট কোরবানি করে ‘ইব্রাহিমী সুন্নাত’ সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
হযরত সোলায়মান (আ.)-এর সম্পর্কে ইহুদি-খিষ্টানদের ভ্রান্ত বিশ্বাস রুন করে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,‘তারা ওই সবের অনুসরণ করে থাকে, যা সোলায়মানের রাজত্বকালে শয়তানরা আবৃত্তি করতো,অথচ সোলায়মান কুফরি করেনি, বরং শয়তানরাই কুফরি করেছিলো।তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শিক্ষা দিত এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার ওপর যা নাজিল হয়েছিলো,তা শিক্ষা দিতো। আসলে তারা উভয়ে এ কথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিতো না যে আমরা এসেছি পরীক্ষাস্বরূপ। কাজেই তুমি কাফির হয়ো না কিন্তু তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যার দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। অথচ আল্লাহর আদেশ ছাড়া তা দ্বারা তারা কারো ক্ষতি করতে পারত না। লোকেরা তাদের কাছে শিখত ওই সব বস্তু, যা তাদের ক্ষতি করে এবং তাদের কোনো উপকার করে না।’ (সূরা: বাকারা,আয়াত : ১০২)
আল্লাহর নবী হযরত সোলাইমান (আ.) এর এর মহা-মূল্যবান-উক্তি ও বাণী “যে অন্যের জন্য কুয়া করে সে নিজেই সে কুয়ায় পতিত হবে।”হযরত সোলাইমান (আ.)“যার বন্ধু বেশি থাকে তার সর্বনাশ হয় কারণ নানা জন নানা পরামর্শ দেয়।”হযরত সোলাইমান (আ.)হযরত সোলাইমান (আ.) ন্যায়,নীতির দিক থেকে সবসময় এক থাকতেন। তিনি ইসলামকে সারা বিশ্বে জাগরণ করতে তাঁর রাজত্বকাল থেকেই চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তিনি আল্লাহ তা’য়ালার মহিমা তুলে ধরতে খ্রিষ্টান অঞ্চল গুলোকেও মুসলিমদের অধীনে নিয়ে আসেন। তিনি ছিলেন খুবই কঠোর। জীনেরা তাঁর বশে থাকতো। হযরত সোলাইমান (আ.) এর উক্তি,বাণী ও উপদেশগুলো আমদের জীবনকে বদলে দিতে অনেক অন্যতম ভুমিকা পালন করবে।
হযরত সোলায়মান (আ.)-এর রাজত্বকালে বেঈমান জিনেরা লোকদের ধোঁকা দিতো এই বলে যে,সোলায়মান জাদুর জোরে সবকিছু করেন। তিনি কোন নবী নন। শয়তানদের ভেল্কিবাজিতে বহু লোক বিভ্রান্ত হচ্ছিলো। এমনকি শেষনবী (সা.)-এর সময়েও যখন তিনি সোলায়মান (আ.)-এর প্রশংসা করেন, তখন ইহুদী নেতারা বলেছিল,আশ্চর্যের বিষয় যে,মুহাম্মাদ সোলায়মানকে নবীদের মধ্যে শামিল করে হক ও বাতিলের মধ্যে সংমিশ্রণ ঘটাচ্ছেন। অথচ তিনি ছিলেন একজন জাদুকর মাত্র। কেননা স্বাভাবিকভাবে কোন মানুষ কি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে চলতে পারে? (ইবনে জারীর)। এক্ষণে সোলায়মান (আ.) যে সত্য নবী, তিনি যে জাদুকর নন,জনগণকে সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এবং নবীগণের মুজেযা ও শয়তানদের জাদুর মধ্যে পার্থক্য বুঝাবার জন্য আল্লাহ পাক হারূত ও মারূত নামে দু’জন ফেরেশতাকে ‘বাবেল’ শহরে মানুষের বেশে পাঠিয়ে দেন।‘বাবেল’হলো ইরাকের একটি প্রাচীন নগরী,যা ঐসময় জাদু বিদ্যার কেন্দ্র ছিলো। ফেরেশতাদ্বয় সেখানে এসে জাদুর স্বরূপ ও ভেল্কিবাজি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে থাকেন এবং জাদুকরদের অনুসরণ থেকে বিরত হয়ে যেন সবাই সোলায়মানের নবুয়তের অনুসারী হয়, সেকথা বলতে লাগলেন। জাদু শৈপ্লিক ক্ষমতা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। জাদু ও মুজেযার পার্থক্য এই যে, জাদু প্রাকৃতিক কারণের অধীন। কারণ ব্যতীত জাদু সংঘটিত হয় না। কিন্তু দর্শক সে কারণ সম্পর্কে অবহিত থাকে না বলেই তাতে বিভ্রান্ত হয়। এমনকি কুফরীতে লিপ্ত হয় এবং ঐ জাদুকরকেই সকল ক্ষমতার মালিক বলে ধারণা করতে থাকে।
একদা নবী হযরত সোলায়মান (আ.) আল্লাহকে বলেন,আল্লাহ আমি আপনার সৃষ্টিজগতের মাখলুকাতদের খানা খাওয়াবো। মহান আল্লাহ তা’য়ালা সোলায়মানকে খাওয়ানোর হুকুম দেন। সোলায়মান (আ.)বিশাল এলাকা জুড়ে রান্নার আয়োজন করেন। রান্না শেষ হয়ে দাওয়াতি সকল মাখলুকাতকে লাইন ধরে বসতে বলে। সাগর থেকে এক তিমি মাছ এসে বলেন,সোলায়মান আমি লাইনবিহীন আমি আপনার মেহমান আমাকে খানা দেন,আমি ক্ষুধার্ত আমি মারা গেলে আল্লাহর দরবারে আপনাকে বিচারের কাঠগড়ায় দ্বারাতে হবে। হতভাগ হয়ে সোলায়মান (আ.) তাঁর রক্ষিত জীনকে খানা দিতে বলে। একপর্যায়ে সকল খানা শেষ হয়ে যায় তারপরও তিমির পেট ভরে না। এভাবে তিমি বলে,সোলায়মান আল্লাহপাক আমাকে দৈনিক তিনবার খানা খাওয়ার একবারের সমান হয়নি।তখন সোলায়মান (আ.) আল্লাহর দরবারে পড়ে যায়। কেউ যেটা পাড়ে না পাড়ে আল্লাহ। কেউ যেটা দেখে না দেখে আল্লাহ। রিজিকের মালিক আল্লাহ। হযরত দাঊদ (আ.)-এর জন্য আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বাধিক শক্ত ও ঘন পদার্থ লোহাকে নরম ও সুউচ্চ পর্বতমালাকে অনুগত করে দিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে হযরত সোলায়মান (আ.)-এর জন্য আল্লাহ শক্ত তামাকে গলানো এবং বায়ু,জিন ইত্যাদি এমন সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বস্তুকে অনুগত করে দিয়েছিলেন,যা চোখেও দেখা যায় না। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহর শক্তি বড়-ছোট সবকিছুর মধ্যে পরিব্যাপ্ত।
হযরত সোলায়মান (আ.) অনুপম সাম্রাজ্যের অধিকারী ছিলেন। কেবল সমগ্র বিশ্বের নয়,বরং জিন জাতি বিহঙ্গকুল ও বায়ুর উপরও তাঁর আদেশ কার্যকর ছিলো। কিন্তু এতসব উপায় উপকরণ থাকা সত্বেও তিনি মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই পেলেন না। নির্দিষ্ট সময়ে তার মৃত্যু আগমন করেছে। বায়তুল মোকাদ্দাসের নির্মান কাজ হযরত দাউদ (আ.) শুরু করেছিলেন এবং হযরত সোলায়মান (আ.) তা শেষ করেন। তাঁর মৃত্যুর পুর্বে কিছু কাজ অবশিষ্ট ছিলো। কাজটি অবাধ্যতাপ্রবণ জিনদের দায়িত্বে ন্যস্ত ছিলো। তারা হযরত সোলায়মান (আ.) এর ভয়ে কাজ করত। তারা তাঁর মৃত্যু সংবাদ অবগত হতে পারলে তৎক্ষণাৎ কাজ ছেড়ে দিতো। ফলে নির্মাণ অসমাপ্ত থেকে যেত। হযরত সোলায়মান (আ.)আল্লাহর নির্দেশে এর ব্যবস্থা এই করলেন যে,মৃত্যু পূর্বক্ষণে তিনি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুুত হয়ে তার মেহরাবে প্রবেশ করলেন। মেহরাবটি স্বচ্ছ কাঁচের নির্মিত ছিলো। বাইরে থেকে ভিতরের সব কিছু দেখা যেলো,তিনি নিয়মানুযায়ী এবাদতের উদ্দেশ্যে লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন যাতে আত্মা বের হয়ে যাওয়ার পরও দেহ লাঠির সাহায্যে স্বস্থানে অনড় থাকে। যথা সময়ে তার আত্মা দেহপিঞ্জর ছেড়ে গেলো কিন্তু লাঠির উপর ভর করে তাঁর দেহ অনড় থাকায় বাইরে থেকে মনে হত তিনি এবাদতে মশগুল রয়েছেন। কাছে গিয়ে দেখার সাধ্য জিনদের ছিলো না। তারা জীবিত মনে করে দিনের পর দিন কাজ করতে লাগলো। অবশেষে এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে বাইতুল মোকাদ্দাসের নির্মাণ কাজও সমাপ্ত হয়ে গেল। হযরত সোলায়মান (আ.)-এর লাঠিতে আল্লাহ তা’য়ালা উইপোকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। কোরআন পাকে একে ‘দাব্বাতুল আরদ ’বলা হয়েছে। উইপোকা ভিতরে ভিতরে লাঠি খেয়ে ফেলল। লাঠির ভর খতম হয়ে গেলে সোলায়মান (আ.) এর অসার দেহ মাটিতে পড়ে গেলো। তখন জিনেরা জানতে পারলো তার মৃত্যু হয়ে গেছে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে আরও বর্ণীত আছে যে,মৃত্যুর পর হযরত সোলায়মান (আ.) লাঠিতে ভর দিয়ে এক বছর দন্ডায়মান থাকেন।(কুরতুবী) কতক রেওয়াতে আছে, জিনরা যখন জানতে পারলো যে,হযরত সোলায়মান (আ.) অনেক পূর্বেই মারা গেছেন কিন্তু তারা টের পাইনি। তখন তাঁর মৃত্যুর সময় কাল জানার জন্য একটি কাঠে উইপোকা ছেড়ে দিলো। একদিন এক রাত্রে যতটুকু উইপোকা খেল সেটি হিসাব করে তারা আবিস্কার করলো যে,হযরত সোলায়মান (আ.)-এর লাঠি উঁইয়ে খেতে এক বছর সময় লেগেছে।
নবী হিসেবে হযরত সোলায়মান (আ.)-কে আল্লাহ তা’য়ালা অসীম ক্ষমতা,জ্ঞান আর প্রজ্ঞার অধিকারী বানিয়ে দিয়েছিলেন। মানুষ, জ্বীন এবং পাখি এই তিন প্রজাতি ছিলো সোলায়মান (আ.) এর সেনাবাহিনীর অংশ। আল্লাহ হযরত সোলায়মান (আ.)-কে বিরল ক্ষমতার অধিকারী করেছিলেন। পশুপাখি, জিন থেকে শুরু করে প্রবাহিত বাতাস পর্যন্ত তাঁর অনুগত ছিলো। তাঁর বাহিনীতে অসংখ্য জিন ও পশুপাখি সংযুক্ত ছিলো।তিনি ছিলেন এক বিশিষ্ট মুজেজার অধিকারী। তিনি সকল প্রাণীকূল ও গাছপালার ভাষা বুঝতেন এবং শুনতে পেতেন। অসংখ্য জীন তাঁর ক্রীতদাস ছিলো। হযরত সোলায়মান (আ.) শেষনবী (সা.)-এর আবির্ভাবের প্রায় ১৫৪৬ বছর পূর্বে সোলায়মান (আ.) মৃত্যুবরণ করেন। হযরত সোলায়মান (আ.) ৫৩ বছর বেঁচেছিলেন। তন্মধ্যে ৪০ বছর তিনি রাজত্ব করেন। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর পুত্র রাহবা‘আম ১৭ বছর রাজত্ব করেন। অতঃপর বনী ঈসরাইলের রাজত্ব বিভক্ত হয়ে যায়। হযরত সোলায়মান (আ.) ঘুমিয়ে আছেন ঈসরাইলে।
লেখকঃ গবেষক,সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ,
চেয়ারম্যান গ্রিন ক্লাব,মানিকগঞ্জ,সাংবাদিক ও কলামিস্ট