আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামই হলো জিহাদ

মো.আলতাফ হোসেন ঃঃ
জিহাদ আরবি শব্দ। যার অর্থ সংগ্রাম; কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য লাভের জন্য সমগ্র শক্তি নিয়োগ করাকে বোঝানো হয়। তবে সচরাচর ইসলামী পারিভাষিক অর্থে ‘জিহাদ’ কথাটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআনে জিহাদের কথা ৪১ বার উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে আল্লাহের পথে সংগ্রাম করা অর্থে ‘জিহাদ’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে। জিহাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে মুজাহিদ বলা হয়। জিহাদকে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হিসাবে গণ্য করা হয়।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী স্থানভেদে জিহাদ তিন রূপ হতে পারে। ১. পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য স্বীয় কৃপ্রবৃত্তির বিরূদ্ধে জিহাদ, ২. মুসলিম সমাজকে উন্নয়নের সংগ্রাম,৩.যুদ্ধক্ষেত্রে সংগ্রাম। মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে জিহাদকে মুসলমানদের জন্য একটি ‘কর্তব্য’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে ‘হারব’ বা ‘যুদ্ধ’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘জিহাদ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মে জিহাদ শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। সংক্ষেপে বলা যায়,সমগ্র মানবজাতির সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করে ইসলামের নিজস্ব মতাদর্শ অনুসারে নতুন করে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে চেষ্টা, সংগ্রাম ও চূড়ান্ত শক্তি প্রয়োগের নামই হলো জিহাদ। বিশেষ কোনো জাতির হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে অন্য কোনো বিশেষ জাতির হাতে তুলে দেয়া ইসলামের লক্ষ্য নয় বরং এর লক্ষ্য এই যে, (ইসলামের ভাষ্যমতে,) সমগ্র মানবজাতির কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে ইসলামের পরিপূর্ণ আদর্শ দ্বারা সারা বিশ্বকে ঐশ্বর্যমন্ডিত করে তোলা। এ উদ্দেশ্যে বিপ্লব সৃষ্টির জন্য ইসলাম তার অনুসারীদেরকে চেষ্টা ও সংগ্রাম চালিয়ে যেতে বলে। এই ব্যাপক চেষ্টা, সংগ্রাম ও শক্তি প্রয়োগের সমষ্টিগত নামই হচ্ছে ‘জিহাদ’।

ইসলামের একটি শ্রেষ্ঠ জিহাদ হলো সত্যের বাণী,ইসলামের বাণী যেখানে পৌঁছেনি সেখানে পৌঁছিয়ে দেওয়া। অমুসলিমদের নিকট ইসলামের দাওয়াত প্রদান করা। অনেকে জিহাদের নামে অমুসলিম শূন্য রাষ্ট্র করতে চায়। রাষ্ট্র যদি অমুসলিম শূন্য হয় তাহলে ইসলামের দাওয়াতের জিহাদ বন্ধ হয়ে যাবে। পাকিস্তানে উল্লেখযোগ্য অমুসলিম না থাকলেও জিহাদের নামে এক মুসলিম আরেক মুসলিমকে হত্যা করে চলছে। জিহাদের নামে বোমা হামলার ভয়ে জুমার নামাজ অনেক মসজিদ পড়তে পারে না। জঙ্গিরা বুঝতে পারে না দাওয়াতি কাজের জিহাদই এক বড় জিহাদ। আল্লাহ পাক পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ জাতি করা হয়েছে যাতে তোমরা মানুষের কল্যাণে করো।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত : ১১০) কোনো সম্মান তো দায়িত্ব গ্রহণ ব্যতীত অর্জন হয় না। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ ইসলামের বাণী, সত্যের বাণী মানব জাতির কাছে পৌঁছে দেয়া। এটাই ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ।

আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘শত্রুরা যখন তোমাকে মারতে আসবে তখন তাদের মারতে ভয় পেয়ো না’। ইসলামে আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের কথা আছে, স্বপ্রণোদিত হয়ে নয়। প্রিয়নবী(সা.) জীবনে ৮০টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ২৭টি যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। সবগুলো যুদ্ধই ছিলো আত্মরক্ষামূলক। তিনি যে যুদ্ধনীতি ঘোষণা করেছেন তাদের উল্লেখ আছে-অমুসলিম মহিলা, শিশু,বাড়িতে অবস্থানরত বৃদ্ধ এবং তাদের গাছ, ক্ষেত, পশুপাখির ক্ষতি সাধন করা যাবে না এবং তিনি অমুসলিম ধর্মগুরুদের শ্রদ্ধা করতে নির্দেশ দিয়েছে।

ইসলাম মানবজাতির জন্য আল্লাহ তা’য়ালার মনোনীত একমাত্র ধর্ম। যার সকল বিধান মানুষের ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে নির্ধারিত। পক্ষান্তরে শয়তানী বিধান সর্বত্র অন্যায় ও অশান্তির বিস্তৃতি ঘটিয়ে থাকে। যা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে হটিয়ে জাহান্নামের পথে নিতে চায়। সেকারণ আল্লাহ মুসলমানকে ‘ন্যায়ের আদেশ ও অন্যায়ের নিষেধ’-এর দায়িত্ব প্রদান করেছেন এবং তাকে শয়তানের বিরুদ্ধে সর্বদা জিহাদে লিপ্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। জিহাদ ও সন্ত্রাস দু’টি বিপরীতধর্মী বিষয়। জিহাদ হয় মানব কল্যাণের জন্য এবং সন্ত্রাস হয় শয়তানী অপকর্মের জন্য। জিহাদ হলো ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এই ইবাদতকেই শয়তান সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। সেকারণ নানা কৌশলে শয়তান মুসলমানের জিহাদী জাযবাকে ধ্বংস করতে চায়।

জিহাদ অর্থ আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো’ এবং ‘ক্বিতাল’ অর্থ আল্লাহর পথে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা। জিহাদ হলো ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া। পঞ্চস্তম্ভের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায় কিন্তু চূড়া বা ছাদ না থাকলে তাকে পূর্ণাঙ্গ গৃহ বলা যায় না। চূড়াহীন গৃহের যে তুলনা, জিহাদবিহীন ইসলামের সেই তুলনা। জিহাদেই জীবন, জিহাদেই সম্মান ও মর্যাদা। জিহাদবিহীন মুমিন মর্যাদাহীন ব্যক্তির ন্যায়। জিহাদের মাধ্যমেই ইসলাম প্রতিষ্ঠা পায়। আল্লাহর জন্য মুসলমানের প্রতিটি কর্ম যেমন ইবাদত, আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠায় মুসলমানের প্রতিটি সংগ্রামই তেমনি জিহাদ। দ্বীনের বিজয় জিহাদের উপরেই নির্ভরশীল। জিহাদ হলো মু’মিন ও কাফিরের মধ্যে পার্থক্যের অন্যতম মানদন্ড।

বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাতা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, কাফেরদের সাথে সংগ্রাম করতে গিয়ে শক্তি ক্ষয় করা। এর (জিহাদ শব্দ) দ্বারা নিজের প্রবৃত্তি, শয়তান এবং দুরাচার সকলের সাথে সংগ্রাম করাকেও বুঝায়। এখানে প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ বলতে দ্বীন শিক্ষাগ্রহণ করা,শিক্ষাদান করা ও নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা,শয়তানের সাথে সংগ্রাম বলতে তার আনীত সংশয় ও অযাচিত লোভ লালসা প্রতিরোধ করাকে বুঝায়। আর কাফেরের সাথে জিহাদ হাত (শক্তি প্রয়োগ), সম্পদ, কথা কিংবা অন্তর যেকোনোটার মাধ্যমেই হতে পারে। এছাড়া দুরাচারীদের সাথে জিহাদ হাত দ্বারা(শক্তি প্রয়োগ) অতঃপর জবান তারপর অন্তর দ্বারা হতে পারে। (ফাতহুল বারী: জিহাদ ও সিয়ার অধ্যায়) ইমাম জুরজানী (রহঃ) বলেন, জিহাদ হলো-সত্য দ্বীন তথা ইসলামের দিকে মানুষকে আহবান করা। (আত-তা’রীফাত) আল্লামা কাসানী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অর্থ হলো-প্রচেষ্টা ও শক্ত ব্যয় করা কিংবা কোনো কাজে সফল হওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুখের কথা, সম্পদ ও জীবন ইত্যাদি ক্ষয় করে সফলতার মানদন্ডে পৌছার জন্য প্রাণান্তকর প্রচষ্টার নামই জিহাদ। (আল বাদায়েউস সানায়ে)

অত্যাচারী যালিম ও অবাধ্যদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর তিনটি। সক্ষম হলে(ক্ষমতাবান) শক্তি প্রয়োগ করে তা রুখে দেয়া। শক্তি প্রয়োগে অক্ষম হলে মুখের কথা দিয়ে তা রুখবে। তাতেও সক্ষম না হলে অন্তর দিয়ে তাকে (কাজকে) ঘৃণা করবে এবং তা প্রতিহত করার চিন্তায় ব্যাপৃত থাকবে। কেউ যদি জিহাদ না করে কিংবা অন্ততঃপক্ষে জিহাদের কল্পনা মনের ভিতর না রেখে মারা যায় তাহলে যে সে মুনাফিকের একটা গুণাবলী নিয়েই মৃত্যুবরণ করলো। (যাদুল মাআদ) জিহাদের স্তরগুলো নিয়ে কেউ গবেষণা করলে সে দেখতে পাবে,যে সমস্ত নবীদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত (ইসলামের দিকে আহবান) দিতে বলা হয়েছে। তাদের অবর্তমানে তাদের উম্মতের মধ্যকার যোগ্য ব্যক্তিদেরকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা যদি তাদের বাণীকে গ্রহণ না করে এবং এতে বাধা দেয় তবেই যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রথমেই যুদ্ধের নির্দেশ বা অনুমতি দেয়া হয়নি।

মহান আল্লাহ মনোনীত ধর্ম ইসলামে জিহাদের গুরুত্ব ব্যাপক। ‘জিহাদ’ শব্দটি শুনলে আজ মানুষ ভয় পায়। জিহাদের কথা শুনলে শুধু অমুসলিমদের মাঝে নয় মুসলমানদের কাছেও ভীতির সঞ্চার করে। অধিকাংশ মানুষ মনে করেন যে, ‘জিহাদ’ মানে যুদ্ধ আর যুদ্ধ মানেই লাশ আর মৃত্যুর মিছিল। অথচ যেকোন বিষয়ে যুদ্ধ করলে সেটাকে জিহাদ বলা যায় না। জিহাদ শব্দটি আরবি ‘জাহাদাহ’ থেকে এসেছে। আভিধানিক অর্থ চেষ্টা করা, উদ্যমী হওয়া। ইসলামের পরিভাষায় ‘জিহাদ’ অর্থ কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করতঃ সংগ্রাম করা। যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মরক্ষাকেও জিহাদ বলে।

আমাদের দেশের মানুষের ধারণা শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ই জিহাদ করে।সত্যি হলো অমুসলিমরাও জিহাদ করে থাকেন। আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘যারা ঈমান এনেছেন তারা আল্লাহর রাস্তা সংগ্রাম করে এবং যারা কুফুরি করেছে তারা তান্ডবের পথে সংগ্রাম করে। সুতরাং শয়তানের সাথীদের বিরুদ্ধে তোমরা সংগ্রাম করো। (সূরা নিসা, আয়াত : ৭৬)

মু’মিন তার জীবনপথের প্রতিটি পদক্ষেপ ও চিন্তা-চেতনায় শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শয়তানী সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে মু’মিনের সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী। তাই সর্বদা তাকে জিহাদী চেতনা নিয়েই পথ চলতে হয়। কোনো অবস্থাতেই সে বাতিলের ফাঁদে পা দেয় না বা তার সঙ্গে আপোষ করতে পারে না। কেননা শয়তান মু’মিনের প্রকাশ্য দুশমন। বাতিলের সমাজে বসবাস করেও নবীগণ কখনো বাতিলের সঙ্গে আপোষ করেননি। তাদেরকে নিরন্তর যুদ্ধ করতে হয়েছে মূলতঃ সমাজের লালিত আক্বীদা-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে, যা কখনো কখনো সশস্ত্র মুকাবিলায় রূপ নিয়েছে। একই নীতি-কৌশল সকল যুগে প্রযোজ্য।

চেতনাহীন মানুষ প্রাণহীন লাশের ন্যায়। ইসলামের শত্রুরা তাই মুসলমানের জিহাদী চেতনাকে বিনাশ করার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। এযুগেও তা অব্যাহত রয়েছে। তারা ইসলামকে চূড়াহীন একটা পাঁচখুঁটির চালাঘর বানানোর জন্য তাকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ময়দান থেকে হটানোর উদ্দেশ্যে যুগে যুগে নানা থিওরী প্রবর্তন করেছে। এভাবে সুকৌশলে তারা সর্বত্র একদল বশংবদ ‘নেতা’ বানিয়েছে এবং চূড়ার কর্তৃত্ব সর্বদা নিজেদের হাতে রেখে দিয়েছে। ফলে আল্লাহ সার্বভৌমত্ব ও তাঁর প্রেরিত মঙ্গলময় জীবন বিধান প্রায় সকল ক্ষেত্রে পদদলিত হচ্ছে। আর মানবতা ইসলামের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এজন্যই আল্লাহ মু’মিনের ওপর জিহাদকে ফরজ করেছেন। যেমন তিনি বলেন, ‘আর তোমরা জিহাদ কর আল্লাহর পথে যথার্থভাবে; তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন’ (সূরা হজ্জ; আয়াত-৭৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমাদের ওপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে। অথচ তা তোমাদের জন্য কষ্টকর। বহু বিষয় এমন রয়েছে, যা তোমরা অপসন্দ কর। অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার বহু বিষয় এমন রয়েছে, যা তোমরা পসন্দ কর। অথচ তা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। বস্তুতঃ আল্লাহ (পরিণাম সম্পর্কে) অধিক জানেন, কিন্তু তোমরা জানো না’ (সূরা বাক্বারাহ: আয়াত-২১৬)।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, ক্বিয়ামতের দিন প্রথম বিচার হবে (কপট) শহীদের। আল্লাহ তাকে (দুনিয়ায় প্রদত্ত) নেয়ামত সমূহের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং সে তা স্বীকার করবে। অতঃপর তাকে বলা হবে, তুমি ঐসব নেয়ামতের বিনিময়ে দুনিয়ায় কি কাজ করেছ? সে বলবে, আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্য লড়াই করেছি ও অবশেষে শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। বরং তুমি এজন্য যুদ্ধ করেছিলে যেনো তোমাকে ‘বীর’ বলা হয়। আর তা তোমাকে বলা হয়েছে। অতঃপর তার সম্পর্কে আদেশ দেওয়া হবে এবং তাকে উপুড়মুখী করে টানতে টানতে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর আলেমদের, অতঃপর (লোক দেখানো) দানশীলদের একই অবস্থা হবে’।

আল্লাহ বলেন,‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে মৃত ধারণা করো না; বরং তারা জীবিত। তারা তাদের প্রতিপালক হতে জীবিকাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে’ (আলে ইমরান:আয়াত-১৭৯)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাদের আত্মাসমূহ সবুজ বর্ণের পাখির মধ্যে রক্ষিত হয় এবং তাদের জন্য আল্লাহর আরশের নীচে ফানুস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। অতঃপর তারা জান্নাতে যথেচ্ছ বিচরণ করে। পরে তারা আবার ঐসমস্ত ফানুসের দিকে ফিরে আসে। তখন তাদের রব তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে বলেন, তোমরা কি আরো কিছু চাও? উত্তরে তারা বলে, আমরা আর কিসের আকাক্সক্ষা করবো? আমরা তো জান্নাতের যেখানে খুশী বিচরণ করছি। আল্লাহ তাদেরকে এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করলে তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা চাই যে, আমাদের আত্মাগুলিকে পুনরায় আমাদের দেহের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। যেনো আমরা পুনরায় আপনার রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হতে পারি। অতঃপর যখন আল্লাহ দেখবেন যে তাদের আর কিছু প্রয়োজন নেই, তখন তাদের ছেড়ে দিবেন।

ধর্ম মানতে কোনো ধরনের জোর জবরদস্তি নেই। সঠিক পথ ভুল পথ থেকে পরিষ্কারভাবে আলাদা হয়ে গেছে। তাই যে তাগুত (মিথ্যা প্রভুদের) অস্বীকার করবে, এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস আনবে, সে অবশ্যই এমন এক মজবুত হাতল ধরবে, যা ভাঙ্গার কোনো আশঙ্কা নেই। আল্লাহ সব শোনেন, সব জানেন। (আল-বাক্বারাহ:আয়াত-২৫৬)

ইসলাম শান্তির ধর্ম। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) উদারতা, মানবতা, ইসলামের দাওয়াত ও মানুষকে ভালোবেসে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই ধর্মের নামে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, বোমাবাজি, অসহায় নারী ও শিশুর ওপর জুলুম-অত্যাচার, সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা তুলে ধরা, জিহাদের নামে ভুল বুঝিয়ে তরুণদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া ইত্যাদি ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম অন্যায় সহ্য করে না। মুসলিমদের উপর অন্যায় নির্যাতন, নিপীড়ন হচ্ছে, আর মুসলিমরা অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করে থাকবে, এটা ইসলামের শিক্ষা নয়। কারণ এভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে অন্যায় বাড়তেই থাকবে। একটা সময় গিয়ে অন্যায়কারীরা এতটাই শক্তিশালী এবং বেপরোয়া হয়ে যাবে যে, তারা আইনের পরোয়া না করে প্রকাশ্যে অন্যায় করতে থাকবে। কেউ আর তখন প্রতিরোধ করতে সাহস করে এগিয়ে আসবে না। একারণে অন্যায়কে যদি ছোট থাকতেই নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তখন তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অন্যায় প্রতিহত করতে তখন অনেক রক্তপাত ঘটাতে হয়। মানুষকে হত্যা করা অবশ্যই জঘন্য কাজ। কিন্তু মুসলিমদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে বাঁধা দেওয়া, শুধুই মুসলিম হওয়ার জন্য তাদের উপর অত্যাচার করাটা তাদেরকে হত্যা করার থেকেও খারাপ। হত্যা করলে বরং সেই মুসলিমরা শহীদ হয়ে তাদের প্রভুর কাছে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু হত্যা না করে তাদেরকে জীবিত রেখে নির্যাতন করাটা তাদের জন্য বরং আরও বেশি কষ্টের।কিন্তু সীমা অতিক্রম করবে না। অন্যায় প্রতিহত করতে গিয়ে যখন মুসলিমরা লড়াই করবে, যুদ্ধ করবে, তখন তাদেরকে অনেক শর্ত মেনে চলতে হয়।

প্রাচ্য বিশেষজ্ঞ বার্নার্ড লুইসের মতে কোরআন ও হাদিসের অধিকাংশ জায়গাতেই জিহাদ শব্দটি ধর্মযুদ্ধ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইসলামী পন্ডিত ইয়াহিয়া ইবন শরাফ আল-নাদভী বলেছেন,(জিহাদ অর্থ) সমাজের সবার সামগ্রিক দায়িত্ব হলো ন্যায্য প্রতিবাদে অংশ নেয়া, ধর্মের সমস্যা দূর করা, স্রষ্টার আইনের কথা জানা, ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করা ও অন্যায়কে দূর করা।

মুখের ভাষা ও লেখনির সাহায্যে মানুষের মানসিকতা, চিন্তাধারা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন সাধন করা এবং তাদের মধ্যে ‘অন্তর্বিপ্লব’ সৃষ্টি করা জিহাদের একটি দিক। আবার তরবারি (সমরশক্তি) ব্যবহার করে ‘অনৈসলামিক সমাজ ব্যবস্থা’ নির্মূল করে নতুন ‘সুবিচারমূলক ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করাও জিহাদের একটি দিক। এপথে মেধা, অর্থ-সম্পদ, শারীরিক শক্তি সামর্থ্য নিয়োগ করাও জিহাদ। এখানে উল্লেখ্য যে, ইসলাম মনে করে,মানবজাতির জন্য ইসলামী আদর্শই একমাত্র সঠিক ও উপযুক্ত জীবন-দর্শন। দ্বাদশবাদী শিয়া মতাদর্শে জিহাদ, ধর্মের ১০ টি রীতির একটি। আক্ষরিকভাবে জিহাদ শব্দটির অর্থ হলো কোনো বিষয়ে সংগ্রাম করা। এই সংগ্রাম সশস্ত্র বা অহিংস, ধর্মীয় বা ধর্মনিরপেক্ষ,সব রকমেরই হতে পারে। যেমন, মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনকে আরবি ভাষায় জিহাদ বলেই অভিহিত করা হয়। একইভাবে নারীমুক্তির আন্দোলনকেও আরবি ভাষার বিভিন্ন প্রকাশনায় জিহাদ বলা হয়।

একটি হাদীসে এসেছে- রাসূল (সাঃ) বলেছেন, অচিরেই ফিতনা ফাসাদ ও দুর্ঘটনা ঘটবে। যে এই উম্মাতের (মুসলমানদের) মাঝে ফাটল সৃষ্টি করতে চায় সে যেই হোক না কেন তাকে তরবারী দ্বারা শাস্তি দাও (এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব)। (মুসলিম শরিফ, মুসনাদে আহমাদ)
দ্বীন,জীবন, পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ রক্ষায় যুদ্ধ করা বৈধ। রাস্তায় সন্ত্রাসী আক্রমণ প্রতিহত করাও এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (সা.) বলেছেন: যে তার সম্পদ হেফাজত করতে গিয়ে নিহত হয়েছে সে শহীদ, যে পরিবার পরিজনকে হেফাজত করতে গিয়ে নিহত হয়েছে সে শহীদ। যে নিজের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়েছে সে শহীদ এবং যে দ্বীনের (ইসলামের) জন্য নিহত হয়েছে সেও শহীদ। (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমীজি, নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ) আল্লার রাস্তায় জিহাদের ফজিলত অনেক। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন- আল্লাহ তা’য়ালা দায়িত্ব নেন ঐ ব্যাক্তির যিনি আল্লাহর রাস্তায় বের হন তাহাকে একমাত্র আমার উপর ঈমান ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস তাকে বের করে আমি তাকে ফিরাইয়া আনিব এমন অবস্থায় যে, সে সওয়াব পাইবে অথবা গণিমত অথবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাইবো। (বুখারী-১/২২হা;নং-৩৬,মুসলিম-৩/১৪৯৫হা;নং-১৮৭৬,নাসায়ী-৮/১১৯হা;নং-৫০২৯,বায়হাকী-৯/১৫৭হা;নং-১৮২৬৫,সহীহুল জামে’-১৪৯১,মুসনাদে আহমদ-২/৩৮৪হা;নং-৮৯৬৮)
আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেওয়া এমন আমল যাহা মৃত্যুর পরও জারী থাকে। হযরত সালমান ফারসা (রা.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলিতে শুনিয়াছি যে. আল্লাহর রাস্তায় একদিন ও রাত্রি এক মাস রোজা ও রাত জেগে ইবাদত হইতে উত্তম- যদি সে পাহারারত অবস্থায় মারা যায় তবে তার জীবনেকৃত সমস্ত নেক আমলের সওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকবে তাকে জান্নাতের রিযিক দেওয়া হবে ও কবর হাশরের ফেতনা (পরীক্ষা) থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। (মুসলিম) ঐ দুটি কদমকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না যা আল্লাহর রাস্তায় ধুলামন্ডিত হয়।

সাহাবাগণের মধ্যে এ বিষয়টি সুপরিচিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলো যে, জিহাদ যখন ফরজে আইন (ব্যক্তিগত পর্যায়ের ফরজ) হয়ে যায় তখন কোন ব্যক্তি জিহাদে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে না, শুধুমাত্র সে-ই বিরত থাকে যে ব্যক্তি দূর্বল এবং উক্ত কারণে তাকে ক্ষমা করা হয় অথবা যে ব্যক্তি মুনাফিক। এ বিষয়টিই কা’ব ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, যখন তিনি তাবুকের (যুদ্ধ) অভিযান থেকে পিছনে থেকে গিয়েছিলেন নবী করিম (সা.)বের হয়ে যাওয়ার পর আমি যখন লোকদের মাঝে বের হতাম, আমি তাদের মাঝে ঘুরাফেরা করতাম এবং এ বিষয়টি আমাকে খুবই ব্যথিত করতো যে, তখন মুনাফিক অথবা দূর্বল হওয়ার কারণে যাদেরকে আল্লাহ পিছনে থাকার অনুমতি দিয়েছেন তাদেরকে ব্যতীত অন্য কাউকে দেখতে পেতাম না”। আল বুখারী কর্তৃক বর্ণিত, ৪০৬৬; মুসলিম, ৪৯৭৩।

আরবের বাইরে জিহাদ শব্দটি বর্তমানে সশস্ত্র ও নিরস্ত্র সংগ্রাম-দুই রকমেরই অর্থে বর্তমানে ব্যবহৃত হয়। এটি ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করে ইসলাম ধর্ম পালন এবং অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বোঝায়। জিহাদের দুই রকমের অর্থ্য করা একটি বিতর্কিত বিষয়। গ্যালাপ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার অধিকাংশ ব্যক্তি এই শব্দটির অর্থত ইসলামের ও ন্যায়ের জন্য জীবন বিসর্জন করা, অথবা ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বলে মনে করেন। লেবানন, কুয়েত, জর্ডান ও মরক্কোতে অধিকাংশ ব্যক্তি এই শব্দটি দিয়ে স্রষ্টার প্রতি কর্তব্য, বা উপাসনা বোঝেন, এবং শব্দটির সাথে কোনোরকম সশস্ত্র সংগ্রামকে জড়ান না। অন্যান্য দেশের লোকদের মতে পাওয়া গেছে,কঠিন পরিশ্রম করা ও জীবনের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য কাজ করা। ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম করা, শান্তি সমৃদ্ধি ইত্যাদির জন্য কাজ করা,ইসলামের নীতি মেনে চলা।

মক্কার মুশরিকরা মুসলিমদেরকে ইসলাম ত্যাগ করানোর জন্য নানা নির্যাতন করতো। তাদেরকে নামাজ পড়তে দেখলে আক্রমণ করতো। ইসলাম গ্রহণ করেছে শুনলে মরুভূমির প্রখর রোদে তপ্ত বালুতে ফেলে মারধোর করতো। খেতে দিতো না। ব্যবসা করতে দিতো না, যেন তারা আয় রোজগার শূন্য হয়ে ফকির হয়ে যায়। বাড়ি থেকে বের করে দিতো। যতভাবে সম্ভব তারা চেষ্টা করেছে মুসলিমদেরকে ইসলাম ত্যাগ করানোর। এসব ছিলো মুসলিমদের জন্য ফিতনা। এই আয়াতে আল্লাহ বলছেন: এই সব ফিতনা দূর না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করে যেতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না মুসলিমরা বিনা বাঁধায় আল্লাহর দ্বীন অনুসরণ করতে না পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যেতে হবে।

ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য তার হিদায়াতের পথে চলতে গিয়ে পাহাড়সম বাধা অতিক্রম করার জন্য নিজেকে অবিচল রাখা এবং ইসলামের প্রকৃত রূপ অন্যের নিকট উপস্থাপনের মাধ্যমে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাকেই জিহাদ বলে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন: হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হলো,যখনই তোমাদের আল্লাহর পথে জিহাদে বের হতে বলা হয়,তখনি তোমরা মাটি কামড়ে পড়ে থাক?তোমরা কি আখেরাতের মোকাবিলায় দুনিয়ার জীবনকে বেশি পছন্দ করে নিয়েছ?যদি তাই হয় তাহলে তোমরা মনে রেখ,দুনিয়ার জীবনের এমন সাজ সরঞ্জাম আখেরাতে খুবই সামান্য বলে প্রমাণিত হবে। তোমরা যদি না বের হও তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের জায়গায় আরেকটি দলকে নিয়ে আসবেন,তখন তোমরা আল্লাহ তা’য়ালার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি সব বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান। (সূরা তাওবা: ৩৮-৩৯)

দ্বীন অর্থ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য থেকে গড়ে ওঠা জীবন ব্যবস্থা। ফিতনা মানুষকে দ্বীন অনুসরণ করা থেকে দূরে নিয়ে যেতে চায়, বাঁধা দেয়। একারণে ফিতনা দূর না হওয়া পর্যন্ত মুসলিমরা ঠিকমতো দ্বীন অনুসরণ করতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিমদের আল্লাহর দ্বীন মানতে বাঁধাগুলো দূর না হচ্ছে, যাতে করে মুসলিমরা নির্বিঘ্নে দ্বীন পালন করতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু এটা শুধুই প্রত্যক্ষ বাঁধার বেলায় প্রযোজ্য।
সাধারণ পরিস্থিতিতে জিহাদের একমাত্র গ্রহণযোগ্য প্রেক্ষাপট হচ্ছে: মুসলিমদের আত্মরক্ষা এবং মুসলিমদের ইসলাম মেনে চলতে যারা বাঁধা দেয়, তাদের প্রতিহত করা। তারপরেও সেই সব জিহাদে কী করা যাবে, কী করা যাবে না, তার অনেক নিয়মকানুন রয়েছে।[ সবচেয়ে পরিষ্কার নিয়ম হচ্ছে: যে আক্রমণ করছে না, তার কোনো ক্ষতি করা যাবে না। যে সমস্ত লোক মুসলিমদেরকে আক্রমণ করছে না, যেমন নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, পাদ্রী, সন্ন্যাসী, অন্য ধর্মের নিবেদিত অনুসারীরা, যারা কাফিরদের প্রতিষ্ঠানে জীবিকার প্রয়োজনে কাজ করে এদের কারো বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা যাবে না।

হযরত আবু আবাস (রা.) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন- যে ব্যেক্তির দুটি পা আল্লাহর রাস্তায় ধুলা মিশ্রিত হয় তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। (বুখারি) ঐ মুসলিম যিনি কোন কাফেরকে হত্যা করেছেন তিনি জাহান্নামে প্রবেশ করবেন না। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হইতে বর্ণিত তিনি বলেন- নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে মুসলিম কোন কাফেরকে হত্যা করেছেন সে মুসলিম কখনো জাহান্নামে একত্রিত হবেন না। (মুসলিম)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হইতে বর্ণিত নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’য়ালাকে প্রভু, ইসলামকে সত্য ধর্ম ও মুহাম্মাদ (সা.) কে সত্য নবী হিসাবে গ্রহন করে নিয়েছে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। কথাটি আবু সাঈদ খুদরী (রা.) নিকট অত্যন্ত আশ্চর্য মনে হলো। তাই রাসূল (সা.) কে পুনরায় বলার অনুরোধ করলেন। তিনি পুণরায় বললেন। আবু সাঈদ (রা.) পুণরায় বলার অনুরোধ করলেন। রাসূল (সা.) আবারও বললেন। অতঃপর তিনি এরশাদ করলেন আরেকটি আমল এমন রয়েছে যার মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা বান্দাকে জান্নাতে শত স্তর (মর্তবা) উর্ধ্বে স্থান দান করেন। যার প্রত্যেক দুই স্তরের মাঝে আসমান-জমিনের দুরত্ব সমান। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল (সা. ) ঐ’টি কোন আমল? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, উহা হলো আল্লাহ তা’য়ালার রাস্তায় জ্বিহাদ করা। আল্লাহ তা’য়ালার রাস্তায় জ্বিহাদ করা। আল্লাহ তা’য়ালার রাস্তায় জ্বিহাদ করা।(মুসলিম)

লেখকঃ সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ,সভাপতি শারীরিক শিক্ষাবিদ সমিতি
চেয়ারম্যান গ্রিন ক্লাব,লেখক,গবেষক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট

শিরোনাম