আল্লাহর খাঁটি-অকৃত্রিম বন্ধু আদি পিতা হযরত আদম (আ.)

মো.আলতাফ হোসেন ঃঃ
পৃথিবীতে মানবজাতি মহান আল্লাহ তা’য়ালার এক অনন্য সৃষ্টি। শ্রেষ্ঠ কাজ করার জন্যই মানুষের সৃষ্টি।আল্লাহ তা’য়ালার সৃষ্টির মধ্যে জিন,ফেরেশতা ও মানুষ সেরা;তবে মানুষই আশরাফুর মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের মধ্যে এমন কিছু গুণ আল্লাহ দান করেছেন ,যা অন্য সৃষ্টির মধ্যে নেই। সুশ্রী চেহারা, সুষম দেহ,সুষম প্রকৃতি,অঙ্গসৌষ্ঠব, ইত্যাদি একমাত্র মানুষকে দেয়া হয়েছে,যা অন্য কোনো জীবকে দেয়া হয়নি। তাছাড়া বুদ্ধি ও চেতনায় মানুষকে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য দান করা হয়েছে। তাকে বিভিন্ন সৃষ্ট বস্তুর সংমিশ্রণে বিভিন্ন শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করার শক্তি দেয়া হয়েছে। বাকশক্তি ও পারস্পারিক মতবিনিময়ের যে নৈপূণ্য মানুষ লাভ করেছে,তা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই।

নবী-রাসূলরা আল্লাহর মনোনীত ও প্রেরিত পুরুষ। পৃথিবীর বুকে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতিষ্ঠা ও তাঁর দ্বিন প্রচারের জন্য আল্লাহ তাঁদের নির্বাচিত করেছেন। পৃথিবীতে আল্লাহ তা’য়ালা অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তাঁদের ভেতর ২৫ জনের নাম পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে। এর মধ্যে ১৮ জনের নাম সূরা আনআমের ৮৩ থেকে ৮৬ নম্বর আয়াতে একত্রে বর্ণিত হয়েছে এবং বাকিদের নাম অন্যত্র এসেছে। মুসলিমরা নাম জানা ও অজানা সব নবী ও রাসূলকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। প্রথম মানুষ আদম (আ.)-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে নবী আগমনের ধারাক্রম শুরু হয় এবং মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাধ্যমে তা শেষ হয়। ঐতিহাসিকরা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত নবী-রাসূলদের আগমনের একটি ধারাক্রম বর্ণনা করেন। এই ধারাক্রম যতটা না কোরআন-হাদিসনির্ভর, তার চেয়ে বেশি ইতিহাস-আশ্রিত। তবে কোরআনের আয়াত থেকেও নবী-রাসুলদের (আ.) ধারাক্রম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী ও ইসলাম ধর্ম মোতাবেক আদম (আ.) আল্লাহর সৃষ্ট প্রথম মানব। আর তাকে পাঠানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা নিয়োগ করা। সঠিক দিক নির্দেশনার জন্য মহান আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল পাঠিয়েছেন । প্রত্যেক নবী-রাসূলই তাদের উম্মতের সংশোধনের জন্য উত্তম চরিত্র প্রদর্শন করেছেন। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, আল্লাহ যখন ফেরেশতাদেরকে জানালেন যে তিনি পৃথিবীতে তার প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন তখন ফেরেশতারা বললো,“আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরাই তো আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করছি!” তখন আল্লাহ বলেন,“নিঃসন্দেহে আমি যা জানি,তোমরা তা জানো না।” আল্লাহ তা’য়ালা হযরত আদম (আ.)কে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন। তারপর তাঁর দেহে প্রাণ সঞ্চার করেন। হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয় আদমের পাঁজর থেকে। সৃষ্টির পর তাদের আবাস হয় বেহেশত বা জান্নাতে। মানুষ যেহেতু সকল সৃষ্টির সেরা তাই আল্লাহ ফেরেশতাকুলকে আদেশ করেন আদমকে সিজদা করার জন্য। ইবলিশ ব্যতীত সকল ফেরেশতা এই আদেশ প্রতিপালন করেন। কোরআনে বলা হয়েছে,“আমি আদমকে পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি নিযুক্ত করবো।” (সূরা: আল বাকারা,আয়াত-৩০)

আদম ও হাওয়া ইব্রাহিমীয় ধর্মাবলম্বীদের মতাদর্শ অনুযায়ী পৃথিবীর প্রথম পুরুষ ও নারী। মানব প্রজাতির বিস্তার তাঁদের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাঁদের মাধ্যমেই সমগ্র মানব জাতিকে একই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করা হয় যেখানে আদম ও হাওয়া আদি পিতা ও মাতা। বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আ.)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (সূরা ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরি সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন। আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কোরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে।

প্রথম মানুষ আদি পিতা আদম (আ.)-কে আল্লাহ সর্ব বিষয়ের জ্ঞান ও যোগ্যতা দান করেন এবং বিশ্বে আল্লাহর খেলাফত পরিচালনার মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন। সাথে সাথে সকল সৃষ্ট বস্তুকে করে দেন মানুষের অনুগত (সূরা: লোকমান ৩১/২০) ও সবকিছুর উপরে দেন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব (বনী ইসরাইল১৭/৭০)। আর সেকারনেই জিন-ফিরিশতা সবাইকে মানুষের মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য আদমকে সিজদা করার আদেশ দেন। সবাই সে নির্দেশ মেনে নিয়েছিলো। কিন্তু ইবলীস অহংকার বশে সে নির্দেশ অমান্য করায় চিরকালের মত অভিশপ্ত হয়ে যায় (সূরা: বাক্বারাহ ২/৩৪)। অথচ সে ছিলো বড় আলেম ও ইবাদতগুযার। সে কারণ জিন জাতির হওয়া সত্ত্বেও সে ফিরিশতাদের সঙ্গে বসবাস করার অনুমতি পেয়েছিলো ও তাদের নেতা হয়েছিলো কিন্তু আদমের উচ্চ মর্যাদা দেখে সে ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়ে। ফলে অহংকার বশে আদমকে সিজদা না করায় এবং আল্লাহ ভীতি না থাকায় সে আল্লাহর গযবে পতিত হয়। এজন্য জনৈক আরবী কবি বলেন,‘যদি তাকওয়া বিহীন ইলমের কোন মর্যাদা থাকতো, তবে ইবলীস আল্লাহর সৃষ্টিকুলের সেরা বলে গণ্য হতো’।

হযরত আদম (আ.)-কে এক হাজার বছর বয়স দেওয়া হয়েছিলো। রূহের জগতে দাঊদ (আ.)-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি নিজের বয়স থেকে ৪০ বছর তাকে দান করেন। ফলে অবশিষ্ট ৯৬০ বছর তিনি জীবিত ছিলেন। হযরত আদম (আ.)-এর জীবনী থেকে শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ : ১. তিনি সরাসরি আল্লাহর দু’হাতে গড়া এবং মাটি হ’তে সৃষ্ট। তিনি জ্ঞানসম্পন্ন ও পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে জীবন লাভ করেছিলেন। ২. তিনি ছিলেন মানব জাতির আদি পিতা ও প্রথম নবী। ৩. তিনি জিন জাতির পরবর্তী প্রতিনিধি হিসাবে এবং দুনিয়া পরিচালনার দায়িত্বশীল খলিফা হিসাবে প্রেরিত হয়েছিলেন। ৪. দুনিয়ার সকল সৃষ্ট বস্তুর নাম অর্থাৎ সেসবের জ্ঞান ও তা ব্যবহারের যোগ্যতা তাকে দান করা হয়েছিলো। ৫. জিন ও ফিরিশতাসহ সকল প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সৃষ্টির উপরে মানব জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত। সকলে তাদের অনুগত ও তাদের সেবায় নিয়োজিত। ৬. আদমকে জান্নাতে সৃষ্টি করা হয়। যা পৃথিবীর বাইরে আসমানে সৃষ্ট অবস্থায় তখনো ছিলো, এখনো আছে। ৭. জান্নাতে আদমের পাঁজরের হাড় থেকে তার জোড়া হিসাবে স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করা হয়। সেকারণ স্ত্রী জাতি সর্বদা পুরুষ জাতির অনুগামী এবং উভয়ে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। ৮. আদম ও হাওয়াকে আসমানী জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নামিয়ে দেওয়া হয় এবং পৃথিবীর নাভিস্থল মক্কার সন্নিকটে না‘মান উপত্যকায় অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে কিয়ামত পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সকল মানুষের ক্ষুদ্রদেহী অবয়ব সৃষ্টি করে তাদের নিকট থেকে ‘আহদে আলাস্ত’ অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি দাসত্বের স্বীকৃতি ও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। ৯. মানুষ হলো পৃথিবীর একমাত্র জ্ঞান সম্পন্ন প্রাণী। তাকে ভাল ও মন্দ দু’টিই করার ইচ্ছাশক্তি ও স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ১০. আদমের মধ্যে মানবত্ব ও নবুওয়াতের নিষ্পাপত্ব উভয় গুণ ছিলো। তিনি শয়তানের প্ররোচনায় আল্লাহর নিষেধাজ্ঞার কথা সাময়িকভাবে ভুলে গিয়ে নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খেয়ে অনুতপ্ত হন ও তওবা করেন। তওবা কবুল হবার পরে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন। অতএব নিঃসন্দেহে তিনি নিষ্পাপ ছিলেন। একইভাবে আদমের আওলাদগণ পাপ করে তওবা করলে আল্লাহ তা মাফ করে থাকেন। ১১. আদমকে সিজদা না করার পিছনে ইবলীসের অহংকার ও তার পরিণতিতে তার অভিশপ্ত হওয়ার ঘটনার মধ্যে মানুষকে অহংকারী না হওয়ার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। ১২. জৈবিক ও আধ্যাত্মিক দিকের সমন্বয়ে মানুষ একটি অসাধারণ সত্তা, যা অন্য কোন সৃষ্টির সাথে তুলনীয় নয়। ১৩. ঈমানদার বান্দাগণ কিয়ামতের দিন বিচার শেষে পুনরায় জান্নাতে ফিরে যাবে। ১৪. দুনিয়াবী ব্যবস্থাপনার সকল জ্ঞান আদমকে দেওয়া হয়েছিলো এবং তার মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রথম ভূমি আবাদ ও চাকা চালিত পরিবহনের সূচনা হয়। ১৫. সবকিছুই সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সেবার জন্য। আর মানুষ সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহর দাসত্বের জন্য।

কোরআনে আদম (আ:)-এর নাম ১০টি সূরার ৫০ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আল বাকারা,সুরাআলে ইমরান,সূরা আল আরাফ, সূরা বনী ইসরাঈল, সূরা আল কাহফ এবং সূরা ত্বোয়া-হাতে তার নাম, গুনাবলী ও কার্যাবলী আলোচনা করা হয়েছে। সূরা আল হিজর ও সূরা ছোয়াদে শুধু গুণাবলী এবং সূরা আল ইমরান, সূরা আল মায়িদাহ এবং সূরা ইয়াসীনে আনুষঙ্গিক রূপে শুধু নামের উল্লেখ আছে। আবূ হোরায়রা থেকে বর্ণিত যে, হযরত মুহাম্মদ বলেন, আল্লাহ আদমকে সৃষ্টিকালে তার উচ্চতা ছিলো ৬০ ফুট এবং মানুষ বেহেশতে প্রবেশকালে আদমের আকার লাভ করবে।

হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টির জন্য আল্লাহ পাক প্রথমে জিবরাইল ও মিকাইল (আ.) নামক দু’ফেরেশতাকে পাঠালেন। তাঁরা দু’জনে মাটির দুহাই শুনে ফেরত গেলো। এরপর আল্লাহ পাক আজরাইল (আ.) কে পাঠালেন। তিনি মাটির দুহাই অগ্রাহ্য করে পৃথিবীর উপরি ভাগ থেকে বিভিন্ন রঙের মাটি সংগ্রহ করলেন (এ জন্য মানুষ নানা রঙের হয়ে এবং আল্লাহর কাছে নিয়ে গেলেন। আল্লাহ পাক এ মাটি দিয়ে নিজ হাতে আদমের আকৃতি দিলেন এবং তাতে রূহ ফুকায়ে দিলেন। হযরত আদম (আ.) পেলেন জীবন। আল্লাহ পাক আদমের সৃষ্টি শুক্রবারের দিন আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে সম্পন্ন করেন। আল্লাহ পাক আদম (আ.) কে সৃষ্টি করার পর ফেরেশতাদেরকে বললেন,“তোমারা আদমকে সিজদা করো। কেননা তোমাদের জ্ঞানের চেয়ে আদমের জ্ঞান অনেক বেশি।” আল্লাহর আদেশে সব ফেরেশতা আদম (আ.) কে সেজদা করলো কিন্তু শয়তান সেজদা করলো না। সে বললো,“আমি আগুনের তৈরি, আর আদম মাটির তৈরি।”আল্লাহর আদেশ অমান্য করায় আল্লাহপাক শয়তানকে বেহেশত থেকে বিতারণ করলেন। আল্লাহ তা’য়ালা আদম ও তার স্ত্রী হাওয়াকে জান্নাতে রাখলেন। সৃষ্টির পর আদম ও হাওয়ার অবস্থান ছিলো বেহেশতে বা স্বর্গে। সেখানে তাদের জন্য নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়া নিষিদ্ধ ছিলো। শয়তানের প্ররোচনায় আদম এবং হাওয়া উভয়ই নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেলেন। এটি মানুষের আদিপাপ বলে পরিগণিত হয় (বাইবেলের ভাষায়)। এর শাস্তিস্বরূপ সৃষ্টিকর্তা (ইসলামে আল্লাহ) তাদের বেহেশত/ স্বর্গ থেকে বিতাড়ন করেন এবং শাস্তিস্বরূপ তাদের পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। আদম এবং হাওয়া পৃথিবীর ভিন্ন দুটি স্থানে অবতরণ করেন। আদম অবতরণ করেন সিংহলের আদম পাহাড় আর হাওয়া অবতরণ করেন সৌদি আরবের হেজাজে। দীর্ঘদিন পর মক্কার আরাফাত নামক প্রান্তরে তাদের পুনর্মিলন হয়।

পৃথিবীতে আগমনের পর হযরত আদম (আ.) ও হাওয়াকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কাবাগৃহ নির্মাণের আদেশ প্রদান করা হয়। ক্বাবা নির্মিত হয়ে গেলে তাদেরকে তা তাওয়াফ করার আদেশ দেয়া হয়। বর্ণিত আছে আদম কর্তৃক নির্মিত ক্বাবা নূহের মহাপ্লাবন পর্যন্ত অক্ষত ছিলো। ইসলামে আদম (আ.) যার ভূমিকা মানবজাতির জনক হিসেবে। মুসলমানরা তাকে শ্রদ্ধার সাথে দেখেন। হাওয়া হলো “মানবজাতির জননী”। কোরআনে আদম ও হাওয়ার সৃষ্টি সম্পর্কে উল্লেখ করা হযেছে, যদিও বিভিন্ন কোরআনের অনুবাদক আসল সৃষ্টির কাহিনী সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন (সূরা আল-নিসাʼ, আয়াত ১)। কোরআনের মতে আদম ও হাওয়া উভয়েই বেহেশতের বাগানের নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিলেন। ফলশ্রুতিতে তাঁদেরকে বেহেশত হতে বিতাড়িত করে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে পৃথিবীতে নামানো হয়। প্রত্যেককে আলাদা পর্বতশৃঙ্গে প্রেরণ করা হয়েছিলো আদমকে আল-সাফা পর্বতশৃঙ্গে এবং হাওয়াকে আল-মারওয়া পর্বতশৃঙ্গে। ইসলামী সূত্র মতে, আদম ৪০ দিন পর্যন্ত কেঁদেছিলেন যতক্ষণ না তিনি ক্ষমা প্রাপ্ত হন,অতপর আল্লাহ তাঁকে হাজরে আসওয়াদ প্রদান করেন এবং হজ্বের পদ্ধতি শিক্ষাদান করেন।হাদিস অনুসারে আদম ও হাওয়া মক্কার নিকটে আরাফাতের সমভূমিতে পুনরায় মিলিত হয়েছিলেন। তাঁদের দুটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে, কাবিল ও হাবিল। রোকাইল নামে তাঁদের অপর একটি সন্তানের কথাও প্রচলিত রযেছে, সে অসংখ্য মূর্তি সংবলিত একটি প্রাসাদ এবং সমাধিসৌধ তৈরি করে। “আসল পাপ” ধারণাটি ইসলামে বিদ্যমান নেই, কারণ ইসলাম অনুসারে আদম ও হাওয়াকে আল্লাহ ক্ষমা করেছিলেন।

আদম (আ.)-কে দুই ধাপে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। যদিও তাফসিরবিদদের অনেকেই মনে করেন, আদম (আ.)-কে এক ধাপেই পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে। একদল তাফসিরবিদের মতে,প্রথম নির্দেশের মাধ্যমে আদম (আ.)-কে জান্নাত থেকে আসমানে নামানো হয়। এর পরের নির্দেশে আসমান থেকে পৃথিবীতে নামানো হয়। অন্যদল তাফসিরবিদের মতে,এক নির্দেশে এক ধাপে আদম (আ.)-কে পৃথিবীতে পাঠানো হয়। অতঃপর দ্বিতীয়বার নির্দেশের মাধ্যমে আল্লাহ তা’য়ালা বিষয়টি আরো জোরালোভাবে উল্লেখ করেছেন। (তাফসিরুল বাসিত : ২/৪১০; আল-বিদায়াহ : ১/১৮৫-১৮৬)
তাওরাত শরীফের প্রথম সিপারা পয়দায়েশ নামক কিতাবে হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়ার সৃষ্টি ও আদন বাগানের বিষয় পাওয়া যায়। এই কিতাব থেকেই আমরা জানতে পারি আল্লাহ তা’য়ালা কিরূপে বেহেশত,আসমান-জমীন ও তার মধ্যবর্তী সকল জীবন্ত প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। হযরত আদম সাফীউল্লাহ (আল্লাহ্র মনোনীত) নামেও পরিচিত।

ফেরেস্তারা জানতেন, আল্লাহ তা’আলার কোনো কাজই হিকমত থেকে খালি নয়, কিন্তু ঐ হিকমত জানার প্রবল মানসিকতাই তাদেরকে এ প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে। আল্লাহর কাজের সমালোচনা কিম্বা প্রতিবাদ করার মনোবৃত্তি আদৌ ছিলো না (আম্বিয়া-২)। কোরআনের আয়াতসমূহ বিশ্লেষণ করে হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টির ৬ টি ধারাবাহিক পর্যায় পাওয়া যায়। যেমন: ১.প্রথম পর্যায় মাটি-কোরআন বলছে হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। ২. দ্বিতীয় পর্যায় ত্বীন বা খামীর- যা মাটির সাথে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। সূরা সিজদার ৭নং আয়াতে বলা হয়েছে: মানুষ সৃষ্টির সূচনা হয়েছিলো মাটির খামীর থেকে।’ ৩. তৃতীয় পর্যায়- ত্বীনে লাসিব বা আঠাযুক্ত খামীর, যে খামীর অনেক দিন পড়ে থাকার ফলে আঠা সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ বলেন: নিশ্চয়ই আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি আঠাযুক্ত খামীর থেকে। ৪. চতুর্থ পর্যায়- হামায়িন মাসনূন অর্থাৎ ঐ খামীর যাতে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে থাকে। ৫. পঞ্চম পর্যায়- ঐ খামীর যা গন্ধযুক্ত হওয়ার পর শুকিয়ে পোক্ত হয়ে গেছে। সূরা আল হিজরের ২৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে: আমি পচা কর্দম থেকে তৈরি বিশুষক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব। ৬. ষষ্ঠ পর্যায়- ‘বাশার’ বা মাটির চুড়ান্ত অবস্থা যাতে আল্লাহ রূহ প্রবিষ্ট করেছেন। ( সূরা:ছোয়াদ,আয়াত-৭১-৭২)।

যেহেতু আল্লাহ তা’য়ালা আদম (আ.)কে পৃথিবীতে নিজের খলিফা বা প্রতিনিধি নির্বাচনের অভিমত প্রকাশ করেছিলেন সেহেতু তিনি তাকে সিফাতে ইলাহিয়ার সর্বোত্তম সিফাত ‘ইলম’ বা জ্ঞান দ্বারা তাকে গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত করে ছিলেন। তিনি আদমকে জগতের সমস্ত বিষয়ের নাম শিক্ষা দিলেন। পৃথিবীর যাবতীয় জিনিসের বাহ্যিক পরিচয় ও লক্ষণাদি এবং গুণাবলী ব্যাপকভাবে তাঁকে শিক্ষা দিলেন। এমনকি সমস্ত জিনিসের গোপন রহস্যর তিনি তাকে অবহিত করলেন। অতপর: ফেরেস্তাগণকে ঐ সমস্ত জিনিসের নাম বলতে আদেশ করলেন। ফেরেস্তাগণ অসমর্থ হয়ে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন এবং বললেন: ওহে আমাদের রব। আপনি আমাদের যা শিক্ষা দিয়েছেন এ ছাড়া তো আমাদের আর কোনো জ্ঞান নেই। অনন্তর আল্লাহ তা’য়ালা আদম (আ.) কে এ সমস্ত বস্তুর নাম বলতে আদেশ করলে আদম সব কিছুর (বাহ্যিক ও গোপন) গুণাবলী বলে দেন। যুগে যুগে বেশীর ভাগ বান্দাই তার জন্য আত্নোৎসর্গ করেছে,তার অনুশাসনে জীবন অতিবাহিত করেছে, এবং তারই বিধান প্রচারে বিশ্বে আত্নোনিয়োগ করেছে। এ মানব জাতিই জ্ঞান-বুদ্ধির বদৌলতে বসুন্ধরাকে নবতর পন্থায় সমৃদ্ধ করে চলেছে। পক্ষান্তরে যারা বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী, ফ্যাসাদী ও সত্যবিমুখ তারা খুবই নগণ্য। এরাই শয়তানের অনুসারী। কোনো না কোনো পর্যায়ে তারা লাঞ্ছিত ও পতিত হয়। ইতিহাসের এ এক চিরন্তন সত্য,এ এক অনুধাবনের বিষয়।

পৃথিবীর প্রথম মানব ও প্রথম নবী আদম (আ.)। তাঁর মাধ্যমেই নবী আগমনের ধারাক্রম শুরু হয়। আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করে, হে আল্লাহর রাসূল, আদম (আ.) কি নবী ছিলেন? নবী করিম (সা.) বলেন, হ্যাঁ,আল্লাহর কালামপ্রাপ্ত নবী ছিলেন।’(সহিহ আলবানি, হাদিস : ৩৫৯) শিশ ইবনে আদম (আ.) ঐতিহাসিকরা বলেন, আদম (আ.)-এর পর তাঁর পুত্র শিশ (আ.)-কে আল্লাহ নবী মনোনীত করেন। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘আদম (আ.) মারা যাওয়ার পর তাঁর পুত্র শিশ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,পৃষ্ঠা : ২৩২)
ইসলামী ধর্মমতে সৃষ্টির আদি থেকে আল্লাহ যতো নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন তাদের সবাইকেই আল্লাহ তার একত্ববাদ প্রচারের জন্য এবং মানুষের জীবন বিধান হিসেবে দিন-ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যই পাঠিয়েছেন। আল্লাহর সব নবী-রাসূলই ছিলেন আল্লাহর একত্ববাদে দৃঢ় বিশ্বাসী ও আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। আর যেহেতু আল্লাহর কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম হলো ইসলাম। তাই,আল্লাহর সব নবী-রাসূলের ধর্মই ইসলাম এবং তাঁরা সবাই মুসলমান। আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআনে বলেছেন,“তুমি তো কেবল সতর্ককারী, আর প্রত্যেক জাতির জন্য রয়েছে হিদায়াতকারী। (কোরআন ১৩:৭)

ইসলামী ঐতিহ্য মতে আল্লাহ প্রত্যেক জাতির নিকট নবীদেরকে প্রেরণ করেছেন। ইসলাম ধর্ম মতে একমাত্র মুহাম্মদই সমগ্র মানবজাতির নিকট আল্লাহর বার্তা পৌছানোর জন্য প্রেরিত হযেছিলেন এবং অপর সকল নবীগণ নির্দিষ্ট এক বা একাধিক গোত্র বা জাতির জন্যে প্রেরিত হয়েছিলেন।হযরত আদম (আ.)একাধারে মানবজাতির পিতা,এ পৃথিবীতে আল্লাহ তা’য়ালার প্রেরিত খলিফা (প্রতিনিধি) এবং প্রথম নবী। হযরত আদম (আ.) যে পৃথিবীর আদি মানব এবং সমগ্র জাতির আদি পিতা তা কোরআনে পাকের বিভিন্ন আয়াত ও মহানবী (সা.)-এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আল্লাহ পাক বলেন,‘আল্লাহর নিকট নিশ্চয়ই ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্ত সাদৃশ। তিনি তাহাকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তাকে বলেছেন, হও, ফলে সে হয়ে গেলো।’ (সূরা:আল ইমরান,আয়াত- ৫৯)। অর্থাৎ আদম (আ.) পিতা-মাতা ব্যতীত আল্লাহর কুদরতে সৃষ্ট, সরাসরি মাটি হতে। আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন, ‘তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও উহা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেন যাতে সে তার নিকট শান্তি পায়।’(সূরা:আরাফ,আয়াত- ১৮৯)।
সৃষ্টির সেরা জীব “আশরাফুল মাখলুকাত” মানুষ। মানুষকে আল্লাহ তা’য়ালা এতটাই মর্যাদা দিয়েছেন যে, প্রথম মানব আদমকে (আ.) সৃষ্টির পর ফেরেস্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেনো তাকে সেজদা করে। মানুষ এবং জ্বীন জাতি সৃষ্টির পিছনে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য এক এবং অভিন্ন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন-‘‘মানুষ এবং জ্বীনকে শুধু আমারই ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।’’(সূরা:যারিয়াত,আয়াত-৫৬)। মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন-‘আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি এবং জলে-স্থলে তাদের আরোহণ করিয়েছি,তাদেরকে পবিত্র বস্তু দিয়ে রিজিক দিয়েছি এবং আমার বহুসংখ্যক সৃষ্টির ওপর সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি (সূরা:বনি ইসরাইল,আয়াত-৭০)।
পৃথিবীর প্রথম মানব আদম (আ.)। পৃথিবীর প্রথম নবীও তিনি। মহান আল্লাহ তাঁর মাধ্যমেই মানবজাতিকে দেন আশরাফুল মাখলুকাতের সম্মান,যার সম্পর্কে জিন ও ফেরেশতাদের ধারণা দেওয়ার জন্য তিনি আদম (আ.)-কে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য দেন। শুধু তা-ই নয়,এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর এই প্রিয় নবীকে অন্য সব মানুষের থেকে আলাদা সম্মান দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁকে নিজ দুই হাতে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনি বললেন, হে ইবলিস! আমি যাকে আমার দুই হাতে সৃষ্টি করেছি,তার প্রতি সিজদাবনত হতে তোমাকে কিসে বাধা দিলো? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’ (সূরা: সোয়াদ,আয়াত : ৭৫)
আবু মূসা আশ’আরী (রা) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন :আল্লাহ তা’য়ালা আদম (আ)-কে সমগ্র পৃথিবী থেকে সংগৃহীত এক মুঠো মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেন। তাই মাটি অনুপাতে আদমের সন্তানদের কেউ হয় সাদা, কেউ হয় গৌরবর্ণ,কেউ হয় কালো,কেউ মাঝামাঝি বর্ণের। আবার কেউ হয় নোংরা,কেউ হয় পরিচ্ছন্ন,কেউ হয় কোমল,কেউ হয় পাষাণ,কেউ বা এগুলোর মাঝামাঝি।
ইবলীসকে আল্লাহ মানুষের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ সৃষ্টি করেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার হায়াত দীর্ঘ করে দেন। মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ করার জন্য ও তাকে ধোঁকা দেওয়াই শয়তানের একমাত্র কাজ। ‘সে মানুষকে বলে কুফরী করো’ কিন্তু যখন সে কুফরী করে, তখন শয়তান বলে ‘আমি তোমার থেকে মুক্ত। আমি বিশ্বপ্রভু আল্লাহকে ভয় করি’ (সূরা:হাশর ৫৯/১৬)। অন্যদিকে যুগে যুগে নবী-রাসূল ও কিতাব পাঠিয়ে আল্লাহ মানুষকে সত্য পথ প্রদর্শনের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখেন (সূরা: বাক্বারাহ ২/২১৩)। আদম থেকে শুরু করে শেষনবী মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর দুনিয়াতে এসেছেন এবং বর্তমানে সর্বশেষ এলাহীগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের ধারক ও বাহক মুসলিম ওলামায়ে কেরাম শেষনবীর ‘ওয়ারিছ’ হিসাবে আল্লাহ প্রেরিত অহীর বিধান সমূহ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেবার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন (সূরা: মায়েদাহ ৫/৬৭)। পৃথিবীর চূড়ান্ত ধ্বংস তথা কিয়ামতের অব্যবহিত কাল পূর্ব পর্যন্ত এই নিয়ম জারি থাকবে।

নবীগণ ছিলেন মহান আল্লাহর পূত পবিত্র দূত। তাঁরা দিকভ্রান্ত মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছেন। বলে দিয়েছেন অনন্ত জান্নাতের পথ। জান্নাতের নিয়ামত অসীম। মানুষ যা কল্পনাও করতে পারবে না তার চেয়ে ঢের নিয়ামত সেখানে। মহান আল্লাহর এসব নবীগণ তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী উম্মতের মাঝে দ্বীনের কাজ করেছেন। অবশেষে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। হযরত আদম (আ.) এর কবরের অবস্থান সম্পর্কে অসংখ্য কাহিনী আছে। হযরত আদম (আ.) এর পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে। শ্রীলংকার পর্বতের শীর্ষে ৫ ফিট ১১ ইঞ্চি পায়ের ছাপ আছে। হযরত আদম (আ.) এর কবর জর্ডানে। জানা যায়, তিনি নয় শত ত্রিশ বা নয় শত পঞ্চাশ বা একহাজার বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটি ছিলো শুক্রবার। তাঁর জানাজা পড়ান ছেলে শেথ (আ.)। আতা খুরাসানী বলেন,তাঁর মৃত্যুতে গোটা বিশ্ব এক সপ্তাহ শোক পালন করে। ইবন ইসহাক বলেন, তাঁর মৃত্যুতে এক সপ্তাহ চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ ছিলো। তাঁকে জাবালে কুবায়সে বা সিংহলের পাহাড়ে যেখানে প্রথম অবতরণ করেছিলেন বা বায়তুল মুকাদ্দাসে দাফন করা হয়।

লেখকঃ গবেষক,সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ,
চেয়ারম্যান গ্রিন ক্লাব,মানিকগঞ্জ,সাংবাদিক ও কলামিস্ট

শিরোনাম