মোঃ আলতাফ হোসেন ঃঃ
কারাতে বা মার্শাল আর্ট এর উৎপাত্তির সঠিক ইতিহাস জানা না গেলে ও বিশেষজ্ঞদের । ধারণা তিব্বত থেকে আদি কারাতে উৎপওি । হাজার হাজার বছর আগে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা অথবা ধর্ম প্রচারে বন্য প্রাণী থেকে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়ে ।বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বন্য ও হিংস্র প্রাণীদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তাদেরকে অনুসরণ করতো তখন থেকেই মাক্সিক স্টাইল টাইগার ক্ল, ঈগল ক্ল ইত্যাদি স্টাইল এর জন্ম হয় । বহুদিন ধরে কারাতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্য সীমাবদ্ধ ছিল । সাধারণ মানুষের মধ্যে আসে বহুদিন পরে । জীবহত্যো মহাপাপ তাই বৌদ্ধ ভিক্ষুরা আত্মরক্ষার্থে এর প্রয়োগ করতেন । বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দ্বারা কারাত ও দেশান্তরিত হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে কারাতে জাপান হয়ে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে পৌঁছায় । তবে এটা নির্দিধায় বলা যায় যে আধুনিক কারাতের জন্ম দক্ষিন জাপানের অকিও হানা দ্বীপ থেকে। জাপানই কারাতকে সর্বদিক জনপ্রিয় করার জন্য এটিকে খেলা হিসেবে প্রচার করেছে । কারাত একটি জাপানি শব্দ । কারা অর্থ খালি , তে অর্থ হাতে , কারাতে অর্থ খালি হাতে । খালি হাতে যুদ্ধ করার কৌশল কলা কৌলশকে কারাতে বা মার্শাল আর্ট বলে । আর কুংফু হলো একটি চীনা শব্দ । এই শব্দ দ্বারা উল্লেখ করা হয় কোনো অধ্যায়ন শিক্ষা অথবা অনুশীলন। যেটির জন্য প্রয়োজন ধৈর্য , শক্তি। এই শব্দটি দ্বারা উল্ল্যেখ করা হয় চীনা যুদ্ধ বিষয়ক শিল্প কলার ক্ষেত্রে।
কারাতের জনক হিসেবে প্রধানত ড: স্যার ডিগারো কানো ” কে ধরা হয়। তবে ব্রুসলি কে আধুনিক মার্শাল আর্ট এর জনক বলে অভিহিত করা হয়। তিনি ১৯৭৩ সালের ২০ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মার্শাল আর্টের ওস্তাদ ও শিক্ষার্থীদের জন্য তাঁর সিনেমার অনেক কলা-কৌশল রেখে গেছেন,যা যুগ যুগ ধরে মার্শাল আর্ট অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।ব্রুসলি ছাড়াও জ্যাকি চান মার্শাল আর্টের ওস্তাদ ও শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক সিনেমা করেছেন, যা যুগ যুগ ধরে মার্শাল আর্ট শিক্ষার্থীদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। মূলত কারাত, কুংফু মার্শাল আর্ট যে নামেই ডাকিনা কেনো মূল তফাৎ ও উদ্দেশ্য একই। এক এক দেশে এক এক নামে ডাকে- ব্যান্ডে বুদোকান সিতুরিও, সোতোকান গুজারিও উদারিও, হাফকিডো, খিউকেশিং তাইকান্দ, কিক বক্সি ইত্যাদি। প্রিয় পাঠক আমবা গত তৃতীয় ক্লাশে শিখে ছিলাম লাজুইক আজ আমরা শিখবো উরুনকি উরুনকি প্যাক্ট্রিজ করার পূর্বে কিছুক্ষণ শারীরিক ব্যায়ার করে নিলে ভালো হয়। কারণ যে কোনো খেলার পূর্বেই ওয়ার্ম আপ প্রয়োজন । ওয়ার্ম আপ না করে নিলে শরীরের যে কোনো প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে । তাই হাতের ও পায়ের ব্যায়ামগুলো করে নেবো। ব্যায়াম করার পূর্বে মনে রাখতে হবে যাতে ব্যায়ামের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। কিছুক্ষণ ব্যায়াম করার পর যখন শরীরটা প্যাকেটিজের উপযোগী হবে এর পর আমরা মূল কার্যক্রম শুরু করবো। এর আগের ক্লাশে আমরা শিখে ছিলাম লাজুইক। আজ আমাদের লেসনে থাকছে উরুনকি। উরুনকি শুরু করার পূর্বে ঠিক আগের মতোই ছালাম, বো এর পর কিবাডাসির মাধ্যমেই ক্লাশ শুরু হবে। শিক্ষার্থী যখন প্রশিক্ষণ নিবে তখন পা দুটি ভি পজিশনে দাঁড়াবে এবং দুহাতে দুপায়ের পাশে থাকবে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায়। এর পর ডান হাতে ছালাম দিবে বাম হাত মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় কোমড়ের পাশে থাকবে। ছালাম শেষ হলে ডান হাত আবার কোমড়ে চলে আসবে। শিক্ষার্থীরা মনে রাখতে হবে ছালাম দেওয়ায় সময় হোইস শব্দের মাধ্যমে কার্যক্রম চলবে। এর পর ভি পজিশনে থাকা পা দুটি কিবাডাসী পজিশনে চলে আসবে। কিবাডাসী অর্থাৎ দুপা ফাঁক করে হাটু ভাঙ্গা অবস্থায় কোমড়ে পাশে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় হাত থাকবে। সেই সাথে বডি সোজা অবস্থায় থাকবে । এর পর পূর্বের সোডনসখী, দোসখী , লাইজুইক, ১০/১৫/২০ বার করে নিলে ভাল হয়ে। কারণ কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য নিয়মিত নতুন লেসনের সাথে পূর্বের লেসন যোগ করে নিলে ভাল হয়। কারণ একজন প্রশিক্ষনার্থী যত বেশি প্র্যাক্ট্রিজ করবে সে তত দক্ষও কৌশলী হবে। আর সেই সাথে তার দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে। এর পর উরুনকী তার পূর্বে যখন মারবে কিবাডাসী থাকা অবস্থায় হাত কোমড়ের দুপাশে থাকবে। উরুনকি মারার সময় প্রথমে ডান হাতে মারবে এর পর বাম হাতে। কোমড়ে থাকা হাত দুটির মধ্যে ডান হাতে যখন প্রশিক্ষনার্থী উরুনকী মারবে তখন বাম হাত কোমড়ের পাশে থাকবে আর বাম হাতে উরুনকি মারবে বাম । হাত কোমড়ের পাশে থাকবে। ডান হাতে উরুনকি মারার সময় কোমড় থেকে ডান হাত ঘুরে মুষ্টিবদ্ধ হাত টি কপালের বরাবর থাকবে। মুষ্টিবদ্ধ হাতটি কপার থেকে একটু ফাঁক থাকবে ২/৩ ইঞ্চি। হাতের তালুতে যে আঙ্গুল গুলো মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় আছে সেটা কপালের বাহিরে দিকে থাকবে । আর কপালের ভেতর এর থাকবে দিকে তার বিপরীত অংশ। ডান হাতে উরুনকি মারার সময় বাম হাত কোমড়ের পাশে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় থাকবে। আবার একইভাবে বাম হাত অর্থাৎ ডান হাত যেভাব উরুনকী মারা হয়েছিল ঠিক এককই কায়দায় বাম হাতে উরুনকি মারতে হবে। বাম হাতে উরুনকী মারার পর ডান হাত মুষ্টিবব্ধ অবস্থায় কোমড়ের পাশে থাকবে। প্রশিক্ষনার্থীরা যখন এভাবে প্র্যাকটিজ করবে তখন হোইস শব্দের মাধ্যমেই করতে হবে। এভাবে উরুনকী ১০/২০ বা এর অধিক বার প্র্যাকটিজ করা যেতে পারে। যত বেশি অনুশীলন করবে ততো বেশি তার দক্ষতা ও নৈপুন্য বৃদ্ধি পাবে। উরুনকী প্র্যাকট্রিজে কয়েকটি কার্যকারিতা রয়েছে। তার বেশ মধ্যে এটা রাজুতে শক্তি বৃদ্ধিকরে সেই সাথে হাতে কজি¦র ও শক্তি বৃদ্ধি হয়। এটা প্র্যাকট্রিজ মাধ্যমে শুধু হাতের ও কজি¦র শক্তিই বৃদ্ধি হয় না হাতে ও কজি¦ স্টুং হয়। এছাড়া ও ব্লকিং এ ও এর বেশ কার্যেকারিতা রয়েছে। যেমন একজন প্রতিপক্ষ যদি ছুরি কিংবা লাঠি দ্বারা মাথায় আঘাত করতে চায় তখন উরুনকীর মাধ্যমেই প্রতিহত করা সম্ভব । প্রতিপক্ষ ছুরি বা লাঠি দ্বায় যখন মাথায় আঘাত করার জন্য চেষ্টা করে তখন ব্লকিং এর মাইল ফলক হিসেবে কাজ করে থাকে। যখন সে উরুনকীর মাধ্যমে ব্লকিং করবে আঘাত হাতে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে তখন প্রতিপক্ষের আঘাত হতে নিজেতে রক্ষা করতে পারবে। সেই সাথে প্রতিপক্ষকে সে আক্রমন করার সুযোগ পাবে। এভাবে নিয়মিত উরুনকী প্র্যাকটিজের মাধ্যমে একদিকে যেমন শারীরিক সৌন্দর্য কিংবা গঠন বৃদ্ধি করে। সেই সাথে একজন প্রশিক্ষনার্থী হয়ে ওঠে আরো কৌশলী । বৃদ্ধি হতে থাকে তার কারাতে প্রশিক্ষণের স্কীল গুলো। এ ছাড়াও উরুনকীর প্র্যাকট্রিজের মাধ্যমে দুই হাতের সমান দক্ষতা বৃদ্ধি হয় এবং কজি¦র ও বাহুর শক্তি বৃদ্ধি হতে থাকে। একজন ভাল প্রশিক্ষনার্থী যখন নিষ্ঠার সাথে উরুনকী সহ কারাতের প্রতিটি লেসই মনোযোগসহ কারে নিয়মিত প্র্যাকট্রিজ করে তখন তার একদিকে যেমন শরীর ও স্বাস্থ্য অটুট থাকে অন্য দিকে তার প্রতিটি কাজই আনন্দদায় হয়। একজন ভাল কারাতে ম্যান কখনো সমাজিক কোনো অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকতে পারে না। সে সামাজিকভাবে একটি সুন্দর জীবন লাভ করতে পারে এবং দেশের কল্যাণজনক কাজে নিজেকে নিয়োজির রাখতে পারে। আজকাল কারাতের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে শিশু-কিশোররা। প্রচন্ড প্রতিযোগিতামূলক বিশে^ বাচ্চাদের আরো যোগ্য প্রতিযোগী হিসেবে গড়ে তোলার দিকে নজর দিচ্ছে অভিভাবক মহল। মাঠের স্বলতার কারণে ও কম্পিউটার গেমসকেই বাচ্চাদের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হয়ে ওঠেছে । যাদও তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি বিকাশ ঘটছে ফলে মেধায় শানিত হলেও খেলা ধুলার অভাবে শারীরিকভাবে অপরিশ্রমী হয়ে ওঠছে চলবে ।
লেখকঃ সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ (কারাতে ব্লাক বেল্ট ১ম ড্যান) সভাপতি শারীরিক
শিক্ষাবিদ সমিতি,চেয়ারম্যান গ্রিন ক্লাব,গবেষক,শিক্ষক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট